ঢাকা, ১৩ নভেম্বর: দেশের ব্যাংক খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের হার বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য গঠিত ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল পরিচালনার শর্ত শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের ২০ শতাংশ পর্যন্ত শ্রেণিকৃত ঋণ (খেলাপি ঋণ) থাকলেও তারা এই তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারবে।
গতকাল বুধবার (১২ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়।
আগের শর্ত অনুযায়ী, তহবিল ব্যবহারের যোগ্য হতে হলে কোনো ব্যাংককে তার শ্রেণিকৃত ঋণ ১০ শতাংশের কম রাখতে হতো এবং অন্তত তিন বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হতো। নতুন নির্দেশনায় শুধু শ্রেণিকৃত ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।
জানা যায়, গত বছরের আগস্টে সরকারের পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাতে গোপন থাকা বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ পেতে শুরু করে। এর ফলে অনেক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক শর্ত শিথিলের এই সিদ্ধান্ত নিল। তবে এ-সংক্রান্ত পূর্ব ঘোষিত মূল সার্কুলারের অন্যান্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে।
ঋণ বিতরণে অগ্রাধিকার ও সীমা
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা বিতরণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে:
- নারী উদ্যোক্তা
- বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন উদ্যোক্তা
- দুর্যোগে (যেমন নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, অগ্নিকাণ্ড বা কোভিড-১৯–এর মতো মহামারি) ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তা
এছাড়াও, তহবিল থেকে বিতরণকৃত মোট ঋণের ক্ষেত্রে খাত ও উদ্যোক্তা ভেদে নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে:
| ঋণের খাত/উদ্যোক্তা | বিতরণের সীমা |
| উৎপাদন ও সেবা খাত | ন্যূনতম ৭০ শতাংশ |
| ব্যবসা খাত | সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ |
| কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা | কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ |
| মাঝারি উদ্যোক্তা | সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ |
পুনঃঅর্থায়ন স্কিম সম্পর্কে
- চালু: ২০২২ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে ‘সিএমএসএমই খাতে মেয়াদি ঋণের বিপরীতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’ চালু করে।
- তহবিলের আকার: প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা প্রয়োজনে বাড়ানো হতে পারে।
- সুদের হার: ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ২ শতাংশ সুদে অর্থ নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করতে পারে।
- মেয়াদ: স্কিমটির মেয়াদ ৩ বছর হলেও গ্রাহক পর্যায়ে গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ পাঁচ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।