ঢাকা: ভারতের স্থানীয় ও সস্তা ডাল ‘মথ’ (Moth Bean) বাংলাদেশে আমদানি করে তাতে ক্ষতিকর হলুদ রং মিশিয়ে তা মুগ ডাল নামে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএসএফএ) নমুনা পরীক্ষায় মুগ ডালের ৩৩টি নমুনার মধ্যে ১৮টিতে ‘টারটাজিন’ নামে এক ধরনের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ রঙের উপস্থিতি পাওয়ায় সংস্থাটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ক্রেতাদের সতর্ক করেছে।
সরকারি সতর্কবার্তার পর জানা গেছে, দেশে মথ ডাল আমদানির পরিমাণ সম্প্রতি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। গত বছর থেকে আমদানি শুরু হওয়া এই ডাল বর্তমানে মুগ ডালের বাজার দখল করে নিচ্ছে।
কেন মথ ডাল মুগ ডাল নামে বিক্রি হচ্ছে?
ব্যবসায়িক মুনাফার কারণেই মূলত মথ ডালকে মুগ ডাল হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রধান পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ:
| তুলনা ক্ষেত্র | মুগ ডাল (আমদানিকৃত) | মথ ডাল (আমদানিকৃত) | পার্থক্য |
| আকৃতি | কিছুটা গোলাকার | কিছুটা লম্বা আকৃতির | শনাক্ত করা কঠিন |
| আমদানি মূল্য (কেজি প্রতি) | ১ ডলার ৯ সেন্ট (১৩৩ টাকা) | ৮৫ সেন্ট (১০৪ টাকা) | ২৯ টাকা কম |
| খুচরা মূল্য (কেজি প্রতি) | ১৫০-১৬০ টাকা | ১৩০-১৪০ টাকা (মুগ ডাল নামে বিক্রি) | কম দামে বেশি বিক্রি |
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, মথ ডাল আমদানিতে কেজি প্রতি ২৯ টাকা সাশ্রয় হওয়ায় এটি বেশি দামে মুগ ডাল হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। কম দামের কারণে ভোক্তারাও এটি বেশি কিনছেন।
মথ ডাল আমদানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি
দেশের সরকারি পরিসংখ্যানে মথ ডালের কোনো উৎপাদন নেই। এটি প্রধানত ভারতের রাজস্থানের মরু এলাকায় উৎপাদিত একটি খরা সহনশীল ফসল।
- আমদানি শুরু: এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজশাহীর বিসমিল্লাহ ফ্লাওয়ার মিলের হাত ধরে প্রথম মথ ডাল আমদানি হয়।
- আমদানির চিত্র: ২০২৪ সালে মোট ৮,৫১৬ টন মথ ডাল আমদানি হয়। কিন্তু চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে আমদানি হয়েছে ২০ হাজার ৬৯১ টন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০৮ শতাংশ বেশি।
- বর্তমানে ৫৯টি প্রতিষ্ঠান ভোমরা, হিলি ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে এই ডাল আমদানি করছে।
মুগ ডাল আমদানি কমেছে শূন্যের কোঠায়
মথ ডাল আমদানির কারণে দেশের বাজারে মুগ ডালের চাহিদা মেটাচ্ছে মূলত এই সস্তা ডালটি।
- ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ২১ হাজার টন মুগ ডাল আমদানি হয়।
- মথ ডাল আমদানি শুরুর পর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মুগ ডাল আমদানি কমে দাঁড়ায় প্রায় ১৮ হাজার টনে।
- গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মুগ ডাল আমদানি আরও কমে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৯১৩ টনে, বিপরীতে মথ ডাল আমদানি হয় ২১ হাজার ৪১৪ টন।
- চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মুগ ডাল আমদানি হয়েছে মাত্র ২১৩ টন, অথচ মথ ডাল আমদানি হয়েছে ৬,৭৯৯ টন।
স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অভিযান
বিএসএফএ-এর চেয়ারম্যান জাকারিয়া জানিয়েছেন, ডাল বা যেকোনো শস্যদানায় রং মেশানোর অনুমোদন নেই এবং টারটাজিন রং ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।
- রং মেশানোর অভিযোগে সম্প্রতি বাজারগুলোতে অভিযান শুরু হয়েছে।
- গত বুধবার (৫ নভেম্বর) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের দুই ব্যবসায়ীকে মথ ডালে রং মিশিয়ে মুগ ডাল বলে বিক্রির দায়ে জরিমানা করেছে।
- বিএসএফএ রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দিয়ে মুগ ও মথ ডাল আমদানির সময় রং পরীক্ষা নিশ্চিত করার এবং রং মেশানো ডাল আমদানি ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।