কক্সবাজার :অর্থসংকটের কারণে যেকোনও সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের জীবন রক্ষাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি-সেফ লাইফগার্ডের কার্যক্রম। এতে করে পর্যটকদের জন্য মৃত্যুঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, একইসাথে চাকরি হারাবেন প্রতিষ্ঠানটির ২৭ জন লাইফগার্ডসহ মোট ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। ২০১২ সাল থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে এই সেবা প্রদান করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
অর্থসংকট ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউট’–এর (আরএনএলআই) অর্থায়নে ২০১২ সাল থেকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে লাইফগার্ড সেবা চালু হয়। কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এর তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের তৎপরতায় দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হলেও আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে সেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সি-সেফ লাইফগার্ডের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, সংস্থাটি মাসে গড়ে ১৪ লাখ টাকা জোগান দিতো। তিনি আরও বলেন, এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে লাইফগার্ড কর্মীরা অন্তত ৮০৭ জন পর্যটককে প্রাণে বাঁচিয়েছেন এবং ৬৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন।
হোটেল মালিকদের ওপর নির্ভরতা ও শঙ্কা
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটন মন্ত্রণালয় হোটেল ব্যবস্থাপনার নীতিমালায় লাইফগার্ড পরিচালনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ কারণে হোটেল মালিকদের মাধ্যমে লাইফগার্ড সেবা চালু রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বড় হোটেলগুলোকে তিনজন এবং ছোট হোটেলগুলোকে একজন লাইফগার্ডের বেতন পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমান লাইফগার্ডদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
তবে কক্সবাজার হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, হোটেল মালিকদের পক্ষে মাসে ১৪-১৫ লাখ টাকার জোগান দেওয়া সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তিনি জানান, হোটেল মালিকদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই এই উদ্যোগে সাড়া দিচ্ছেন এবং এই প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এর ফলে অক্টোবর মাস থেকে লাইফগার্ড সেবা চালু করা সম্ভব হবে না।
লাইফগার্ড কর্মী মো. ওসমান বলেন, “আমাদের জীবন বাঁচানোর এখন কেউ নেই। দীর্ঘদিন ধরে আমরা পর্যটকদের জীবন বাঁচিয়েছি, এখন আমাদের জীবনটাই ঝুঁকিতে পড়লো।”
অরক্ষিত সৈকত
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে প্রতি বছর প্রায় ৮০ লাখ থেকে এক কোটি পর্যটক আসেন। বর্তমানে মাত্র ৫ কিলোমিটার সৈকতে লাইফগার্ড সেবা থাকলেও বাকি ১১৫ কিলোমিটার সৈকত অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। সি-সেফ লাইফগার্ডের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে এই অরক্ষিত এলাকার পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়বে।
পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সত্ত্বেও অর্থসংকটের কারণে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের জীবন রক্ষাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সি-সেফ লাইফগার্ড’ এর সেবা বন্ধ হতে যাচ্ছে। এতে করে চাকরি হারাবেন প্রতিষ্ঠানটির ৩৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পর্যটকদের জন্য মৃত্যুঝুঁকি বাড়বে।