ঢাকা: আয়কর রিটার্ন অডিট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ‘আয়কর রিটার্ন অডিট নির্দেশনা, ২০২৫’ শিরোনামে প্রকাশিত এই নির্দেশিকায় করদাতাদের রিটার্ন যাচাই-বাছাই থেকে শুরু করে অডিট পরিচালনা এবং নিষ্পত্তির প্রতিটি ধাপ বিস্তারিতভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। রবিবার (১৭ আগস্ট) এনবিআর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এনবিআর জানিয়েছে, নতুন এই নির্দেশনা কার্যকর হলে অডিট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বাড়বে, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে এবং করদাতাদের মধ্যে কর ব্যবস্থা সম্পর্কে আস্থা তৈরি হবে। এই নির্দেশনার মূল লক্ষ্য হলো কর ফাঁকি প্রতিরোধ করা, দেশে একটি সুশৃঙ্খল কর সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং সঠিকভাবে কর আইন বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
কিভাবে হবে রিটার্ন নির্বাচন?
অডিটের জন্য করদাতার রিটার্ন বাছাই করা হবে ঝুঁকিভিত্তিক পদ্ধতিতে। এই প্রক্রিয়ায় মানুষের হস্তক্ষেপ কমাতে একটি স্বয়ংক্রিয় (automated) পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। তবে, যারা কাগজের রিটার্ন দাখিল করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে আপাতত র্যান্ডম (random) বাছাই পদ্ধতি চালু থাকবে। কোম্পানি এবং অন্যান্য করদাতার রিটার্ন আলাদাভাবে যাচাই করে বোর্ডের অনুমোদনের ভিত্তিতে অডিটের জন্য নির্বাচন করা হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে প্রক্রিয়াভুক্ত (processed) রিটার্ন বা নতুন করদাতার প্রথম রিটার্ন সাধারণত অডিটে আনা হবে না, যদি না তাতে বড় ধরনের রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। একই করদাতাকে টানা তিন বছর অডিটের আওতায় আনা যাবে না। তবে, কোনো রিটার্নে লোকসান, শূন্য আয় বা অস্বাভাবিকভাবে কম আয় দেখানো হলে তা অডিটে নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়াও, যেসব করদাতার রিটার্ন আগে কখনো অডিট করা হয়নি, তাদের মধ্যে থেকে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ রিটার্ন বাছাই করার বিধান রাখা হয়েছে।
অডিটের ধাপসমূহ
রিটার্ন নির্বাচনের পর সংশ্লিষ্ট করদাতাকে ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশ দেওয়া হবে। যদি করদাতার ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হয়, তাহলে অডিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। অন্যথায়, একজন কর পরিদর্শক মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করবেন এবং সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলে প্রতিবেদন জমা দেবেন।
করদাতা চাইলে সংশোধিত রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এতে অডিট প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। যদি তিনি সংশোধিত রিটার্ন জমা না দেন, তাহলে আইন অনুযায়ী কর নির্ধারণ করা হবে। অডিটের অগ্রগতি সম্পর্কে মাসিক প্রতিবেদন এনবিআরে পাঠানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ব্যক্তি ও কোম্পানি করদাতাদের জন্য বিশেষ নজরদারি
ব্যক্তি করদাতা: ব্যক্তির আয়কর রিটার্ন অডিটের সময় বেতনভিত্তিক আয়, ব্যাংক হিসাবের জমা, ভাড়া আয়, কৃষি আয়, রেমিট্যান্স, বিনিয়োগ এবং জীবনযাত্রার ব্যয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা হবে। আয়ের সঙ্গে সম্পদ ও ব্যয়ের কোনো অসংগতি আছে কি না, তা বিশেষভাবে দেখা হবে।
কোম্পানি করদাতা: কোম্পানির ক্ষেত্রে নিরীক্ষিত হিসাব জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। অডিটে টার্নওভার এবং ব্যাংক জমার সঙ্গে খরচের মিল, অপ্রাসঙ্গিক খরচ দেখানো হয়েছে কি না এবং উৎসে কর সঠিকভাবে কাটা হয়েছে কি না—এসব বিষয় খুঁটিয়ে দেখা হবে। এছাড়া, নতুন ঋণ বা দেনা সঠিকভাবে দেখানো হয়েছে কি না এবং আয়কর আইনের প্রাসঙ্গিক ধারাগুলো অনুসরণ করা হয়েছে কি না, তাও অডিটের আওতায় আসবে।