বুধবার ২৫ জুন, ২০২৫
সর্বশেষ:
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অশনি সংকেত, বাড়ছে ব্যবসা ও বাণিজ্য ব্যয় অর্থনৈতিক পরিবর্তন এবং নীতিগত ব্যবধানের মধ্যে বাংলাদেশের অটোমোবাইল খাত প্রতিকূলতার মুখোমুখি: সেমিনারে বক্তারা কর ফাঁকিদাতাদের কাছ থেকে ৯ মাসে ৯৯৪ কোটি টাকা উদ্ধার: এনবিআর দেশের প্রথম স্থানীয়ভাবে হোস্টকৃত টিয়ার-৪ ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম চালু করলো এক্সেনটেক ‘বাজেট ২০২৫-২৬ : শিক্ষা ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত এলো গুগল পে, ক্যাশলেস ভবিষ্যতের দিকে আরও এক ধাপ অগ্রসর হলো বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের: গভর্নর চুক্তি ভিত্তিক আমদানিতে ব্যাংকের আর্থিক দায় নেই: বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির মধ্যে ১.৩ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন করেছে আইএমএফ

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অশনি সংকেত, বাড়ছে ব্যবসা ও বাণিজ্য ব্যয়

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on print

ঢাকা, ২৫ জুন (ইউএনবি): ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা বিশ্ব বাণিজ্যিক জীবনরেখার ওপর উল্লেখযোগ্য হুমকি সৃষ্টি করছে, যা ব্যবসার স্থিতিশীলতা jeopardize করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি থেকে পুনরুদ্ধারের পর এই সর্বশেষ ভূ-রাজনৈতিক ধাক্কা তেলের দাম বৃদ্ধি, শিপিং খরচ বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

এই সংঘাতের প্রভাব বিশ্বজুড়ে অনুভূত হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা পরবর্তী পরিস্থিতির দিকে নজর রাখায় শেয়ারবাজারে মন্দা দেখা দিয়েছে।

বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো, বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেল উৎপাদনে এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, যা মোট উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ। গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুট, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ব্যারেল প্রতি ১২০-১৩০ ডলারে পৌঁছাতে পারে। এমন উন্নয়ন সরাসরি উৎপাদন ও শিপিং খরচকে প্রভাবিত করবে, যা অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়ার তীব্রতা বাড়াবে।

সুয়েজ খাল, বৈশ্বিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ, বিঘ্নিত হলে শিপিং চ্যালেঞ্জ আরও বাড়তে পারে। যেকোনো দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের ফলে শিপিং খরচ বৃদ্ধি এবং লিড টাইম দীর্ঘ হতে পারে, বিশেষ করে তেল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের পরিবহনে এর প্রভাব পড়বে। লোহিত সাগর রুট অবরুদ্ধ হলে, জাহাজগুলোকে আফ্রিকার কেপ অফ গুড হোপের মাধ্যমে যাত্রা করতে হবে, যা যথেষ্ট দূরত্ব বাড়াবে এবং শিপিংয়ের সময় ১৫ দিন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেবে।

এই বর্ধিত যাত্রার সম্ভাব্য পরিণতি গভীর, প্রতি কন্টেইনারে শিপিং খরচ অতিরিক্ত ৩০% থেকে ৪০% বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এই অনিশ্চয়তার মধ্যে নেভিগেট করায়, বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর এর প্রভাব উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব:

বাংলাদেশ, একটি জ্বালানি তেল আমদানিনির্ভর দেশ হিসেবে, এই ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরাসরি প্রভাবিত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে অধিকাংশ অপরিশোধিত তেল আমদানির কারণে বৈশ্বিক তেলের দাম বৃদ্ধি দেশের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেবে, যা শিল্প থেকে কৃষি পর্যন্ত সমস্ত খাতে প্রভাব ফেলবে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে, যা ইতিমধ্যেই দুই অঙ্কে পৌঁছেছে।

পোশাক খাতের মতো প্রধান রপ্তানি খাতগুলোও অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়বে। লোহিত সাগরে হুতি বিদ্রোহীদের হামলার কারণে ইতিমধ্যেই শিপিং রুটগুলো পরিবর্তন করতে হচ্ছে, যা জাহাজীকরণের সময় ও খরচ বাড়াচ্ছে। হরমুজ প্রণালী বা সুয়েজ খাল বন্ধ হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, যা রপ্তানি আদেশ বাতিল বা মুনাফা হ্রাসের কারণ হতে পারে। সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে বাংলাদেশের সুনামও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

প্রবাসীদের রেমিটেন্স, যা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস, তা-ও ঝুঁকির মুখে। মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়লে সেখানকার লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান ও আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে আরও চাপ সৃষ্টি করবে।

উচ্চ আমদানি ব্যয় এবং শিপিং খরচ বৃদ্ধির কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে আরও চাপ সৃষ্টি হবে, যা প্রয়োজনীয় আমদানি অর্থায়নে এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তারা ক্রয় কমিয়ে দিতে বা বন্ধ করে দিতে পারে। এর ফলে ক্রেতারা অর্ডার স্থগিত করতে এবং মজুদ বাড়াতে পারে, যার পরিণতিতে উৎপাদন হ্রাস এবং অর্ডার কমে যেতে পারে। ফলস্বরূপ, উৎপাদনকারীরা অতিরিক্ত ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে, কয়েক দিনের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো অপরিণত হতে পারে। পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকদের দ্রুত এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে এই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ঝড় থেকে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করা যায়।

আরও পড়ুন