নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে দেশের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নমূলক নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করলেও, সামগ্রিক অর্থনীতি এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। ফলে এই বিষয়ে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) অডিটোরিয়ামে ‘ডিসিসিআই জার্নাল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনোমিক পলিসি’-এর দ্বিতীয় সংস্করণ এবং ‘ট্যাক্স গাইড ২০২৫-২৬’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব এই মন্তব্য করেন।
গবেষণামূলক কার্যক্রমকে স্বাগত
বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে ঢাকা চেম্বারের গবেষণা কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘রুল অব অরিজিন’ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর সুনির্দিষ্ট গবেষণাপত্র ও প্রকাশনা প্রণয়নের মাধ্যমে ডিসিসিআই দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে।
কর জাল সম্প্রসারণের তাগিদ ডিসিসিআই সভাপতির
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, গত চার দশক ধরে ঢাকা চেম্বার তার সদস্যদের আয়কর, ভ্যাট, কাস্টমস আইনের পরিবর্তন সম্পর্কে অবহিত করার জন্য ‘ডিসিসিআই ট্যাক্স গাইড’ প্রকাশ করে আসছে।
দেশের সার্বিক উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে তিনি জিডিপিতে করের অবদান বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর জোর দেন:
- করজাল সম্প্রসারণ।
- রাজস্ব প্রদানের প্রক্রিয়ার পুরোপুরি অটোমেশন নিশ্চিতকরণ।
- সংশ্লিষ্ট নীতিমালার সহজীকরণ ও সংস্কার।
তিনি আরও বলেন, প্রকাশিত ‘ডিসিসিআই জার্নাল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনোমিক পলিসি’-এর দ্বিতীয় সংষ্করণে সামষ্টিক অর্থনীতি, দক্ষতা উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, এলডিসি উত্তরণ, আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থাপনা সহ রাজস্ব ও মুদ্রানীতি প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণামূলক তথ্য স্থান পেয়েছে, যা সরকার ও বেসরকারিখাতে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে সহায়ক হবে।
দারিদ্র্য নিরসনে রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন জরুরি
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই)-এর চেয়ারম্যান ও ডিসিসিআই জার্নালের প্রধান সম্পাদক ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশে দারিদ্রতার হার বৃদ্ধির আংশকার বিষয়টি ওঠে এসেছে, যা বেশ উদ্বেগের।
তিনি মত প্রকাশ করেন, সামগ্রিকভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা সম্ভব হলে দারিদ্রতা বৃদ্ধির আংশকা দূরীভূত হবে, তবে এক্ষেত্রে রপ্তানিমুখী শিল্পায়নের প্রতি বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক নীতিমালাসমূহের আশু সংস্কারের বিষয়ের উপর তিনি জোর দেন।
অনলাইন কর প্রক্রিয়ায় এনবিআর-এর প্রত্যাশা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (কর ব্যবস্থাপনা ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ বলেন, ঢাকা চেম্বার কর্তৃক প্রকাশিত ট্যাক্স গাইডটি দেশের সকল স্তরের করদাতাদের অনলাইন কর প্রদান প্রক্রিয়াকে আরও সহজতর করবে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে প্রায় ২০ লাখ করদাতা অনলাইন প্রক্রিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে কর প্রদান করেছেন এবং চলতি বছরে ৫০ লক্ষ মানুষ এ ব্যবস্থায় কর প্রদান করবে বলে এনবিআর প্রত্যাশা করছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অনলাইন ভিত্তিক কর প্রদান ব্যবস্থা জনগণের মাঝে স্বস্তি আনয়ন, হয়রানি দূরীকরণ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের সহ-সভাপতি মোঃ সালিম সোলায়মান সহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।