নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: জামায়াত-ই-ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান শনিবার বলেছেন, দেশে দেশি ও বিদেশি উভয় ধরনের বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য টেকসই রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রাথমিক প্রয়োজন।
ঢাকায় একটি হোটেলে বাংলা দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত বাংলাদেশ ইকোনমিক সামিট ২০২৫-এর তৃতীয় অধিবেশনে তিনি এই মন্তব্য করেন। “অর্থনীতিতে ন্যায্যতা” (Fairness in the Economy) শীর্ষক এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন তিনি। অধিবেশনটি পরিচালনা করেন বণিক বার্তা-এর সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মুহাম্মদ।
ডাঃ শফিকুর রহমান দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনার কথা উল্লেখ করে বলেন যে, সস্তা শ্রম, কর অব্যাহতির সুবিধা এবং লাভের নিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও, নিরাপত্তার গ্যারান্টি নিয়ে আস্থার অভাবে বিনিয়োগকারীরা দ্বিধাগ্রস্ত।
জামায়াত আমীর বলেন, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ ফিরে এলে অনেক দেশই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। তবে একই সঙ্গে উদ্যোক্তারা দুর্নীতিমুক্ত সরকারি পরিষেবা চেয়েছেন, কারণ তার মতে দুর্নীতি দেশকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে রাখছে।
বর্তমান কর ব্যবস্থার সমালোচনা করে ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, দেশের ধনী-গরিব সবাই অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “একজন ভিক্ষুকও দোকান থেকে কিছু কিনলে কর দেয়। এমনকি একটি নবজাতকের জন্য কোনো পণ্য কেনা হলেও তাকে কর দিতে হয়।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, নাগরিক-বান্ধব না হওয়ার কারণে কর কর্মকর্তারা অনেক সময় কর আদায়ের সময় সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেন। রহমান জোর দিয়ে বলেন, সবার জন্য ন্যায্যতা ও সমান সুযোগ নিশ্চিত না হলে অর্থনীতি এগিয়ে যেতে পারে না। এর জন্য প্রতিটি সেবায় “দক্ষ ও সৎ ব্যক্তি” থাকা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে তিনি শিক্ষাব্যবস্থাকে “সনদভিত্তিক থেকে কাজ ও দক্ষতানির্ভর” করতে সংস্কারের আহ্বান জানান।
তিনি উল্লেখ করেন যে, বিদেশি ঋণ শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব নাগরিকের মধ্যে সমানভাবে ভাগ হয়ে যায়, যা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। তিনি মনে করেন, বৈষম্য, দুর্নীতি এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাব বাংলাদেশের মানবসম্পদকে প্রকৃত জাতীয় সম্পদে পরিণত হতে বাধা দিচ্ছে।
তিনি মেধা পাচার (brain drain) সমস্যার কথাও তুলে ধরেন, যেখানে অনেক প্রতিভাবান বাংলাদেশি বিদেশে পাড়ি জমান কারণ তারা মনে করেন নিজ দেশে তাদের দক্ষতার যথাযথ মূল্যায়ন হয় না।
জাতীয় অগ্রগতির জন্য তিন অগ্রাধিকার ক্ষেত্র:জামায়াত আমীর জাতীয় অগ্রগতির জন্য তিনটি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছেন:
- কৃষি সহ সকল খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার।
- সকল স্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা।
- সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
তিনি উপসংহারে বলেন, এই তিনটি ক্ষেত্র নিশ্চিত করা গেলে সমাজ স্থিতিশীল হবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য সময় লাগলেও দৃঢ় অঙ্গীকারের মাধ্যমে এর সূচনা করতে হবে।
অধিবেশনে অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব এবং জামায়াতের অর্থ বিষয়ক নেতা মোঃ শফিউল্লাহ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের সুযোগ পেলে তাদের সংগঠনের আর্থিক খাতের কর্মপরিকল্পনাও তুলে ধরেন।