আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে প্রত্যর্পণের জন্য ঢাকা যখন নতুন করে দিল্লিকে আহ্বান জানাল, ঠিক সেই সময়েই বুধবার (১৯ নভেম্বর) ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (NSA) অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান।
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, “তাঁরা কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ (CSC)-এর কাজ এবং গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা করেছেন।”
বৈঠকের পর ড. খলিলুর রহমান ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডোভালকে তার সুবিধামত সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
সিএসসি বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল
ড. খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ (CSC)-এর সপ্তম এনএসএ-স্তরের বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লিতে রয়েছে। এই বৈঠকের আতিথেয়তা করছেন ভারতের এনএসএ অজিত ডোভাল।
CSC-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো হলো: ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মরিশাস এবং বাংলাদেশ (২০২৪ সালে পূর্ণ সদস্য)। সেশেলস পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে এবং মালয়েশিয়া অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে।
ড. খলিলুর রহমান এই আঞ্চলিক ফোরামে অংশ নিতে মঙ্গলবার রাতে অজিত ডোভালের আমন্ত্রণে দিল্লিতে পৌঁছান।
প্রত্যর্পণ ইস্যু: পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়টি ড. খলিলুর রহমান ভারতের কাছে উত্থাপন করবেন কিনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌহিদ হোসেন বলেন, “ড. রহমানের আলোচ্যসূচিতে আমি হস্তক্ষেপ করতে চাই না।”
তবে উপদেষ্টা হোসেন জানান, ড. খলিলুর রহমান যদি প্রয়োজন মনে করেন, তবে অবশ্যই বিষয়টি তুলতে পারেন, তবে এই সংক্রান্ত কাজ দাপ্তরিক চ্যানেলের মাধ্যমেই সম্পন্ন হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার গত সোমবার ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়, যাতে ইতোমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে দ্রুত বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদারে সিএসসি
অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. রহমানের এই CSC-তে অংশগ্রহণ আঞ্চলিক সহযোগিতাকে পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সরকারের প্রচেষ্টারই ধারাবাহিকতা।
কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ (CSC)-এর মূল উদ্দেশ্য হলো সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য সাধারণ উদ্বেগের বিষয়— যেমন আন্তঃসীমান্ত হুমকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে জোরদার করা।
সিএসসি এর অধীনে সহযোগিতার পাঁচটি মূল স্তম্ভ হলো:
- সামুদ্রিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা;
- সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ মোকাবিলা;
- পাচার ও আন্তঃসীমান্ত সংগঠিত অপরাধ দমন;
- সাইবার নিরাপত্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও প্রযুক্তির সুরক্ষা; এবং
- মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ।
অন্তর্বর্তী সরকার আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থার বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। এর আগে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই বছরের এপ্রিলে বিমসটেক (BIMSTEC)-এর চেয়ার নির্বাচিত হন। তিনি সার্ক (SAARC)-কে পুনরুজ্জীবিত করার জন্যও কাজ করছেন বলে প্রেস উইং জানিয়েছে।
ড. খলিলুর রহমান এর আগে চীনের কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত চায়না-ইন্ডিয়ান ওশান রিজিওন ফোরামেও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।