ডিজিটাল ফাইন্যান্সে নিরাপত্তা ঝুঁকি: বাড়ছে জালিয়াতি
ঢাকা : বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংকিং দ্রুত বাড়লেও নিরাপত্তা ও জালিয়াতি এখনও গ্রাহকদের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয় বলে সেমিনারে বক্তারা জানিয়েছেন।
মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)-এর উদ্যোগে ‘সবার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং: আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ব্যবধান দূর করা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, ব্যাংক ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) প্রতারণা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট ও এমএফএস আউটলেট খোলার কারণে প্রতারকদের চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে, ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পান না।
সেমিনারে জানানো হয়, প্রতারক চক্র প্রতি মাসে ১০ থেকে ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব শিশির হায়দার চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মোঃ রেজাউল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রবি আজিয়াটা পিএলসি-এর বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বের প্রধান সঞ্জিদা হোসেন।
আলোচনায় অংশ নেন ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোঃ ইলিয়াস জিল্লু, শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান, সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আজিজুর রহমান, বিটল সাইবার সিকিউরিটি লিমিটেডের চিফ সাইবার অপারেশন অফিসার শাহী মিরজার এবং ওমেগা এক্সিম লিমিটেডের পরিচালক রেজওয়ান আলী।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডিসিসিআই-এর সভাপতি তাসকিন আহমেদ।
আইসিটি সচিব শিশির হায়দার চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকিং এবং একটি ক্যাশলেস অর্থনীতির প্রসারে ডিজিটাল যাচাই এবং পরিচয় ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, আইসিটি বিভাগ এবং পুলিশের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. রেজাউল ইসলাম বলেন, সব লেনদেনের জন্য ক্যাশলেস পেমেন্ট সিস্টেম প্রসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানের পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ইলিয়াস জিল্লু বলেন, ব্যাংক এবং এমএফএস খাত থেকে প্রতি মাসে ১০ থেকে ২০ কোটি টাকা চুরি হচ্ছে। তিনি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহকের অর্থের সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর জোর দেন।
শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের আরিফ খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও সিঙ্গাপুরের মতো বাংলাদেশেরও একটি ব্যক্তিগত ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম চালু করা উচিত, যা গ্রাহকদের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করবে। তিনি মনে করেন, এই ব্যবস্থা চালু হলে ডিজিটাল ব্যাংকিং সহজ হবে।
সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আজিজুল ইসলাম আর্থিক আইন সংস্কারের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আর্থিক মামলার নিষ্পত্তি হতে ন্যূনতম পাঁচ বছর সময় লাগে, যা জালিয়াতি ও ঋণখেলাপির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তিনি আর্থিক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একটি পৃথক আদালত গঠনের প্রস্তাব করেন।
সেমিনারে উপস্থাপিত তথ্যানুসারে, নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, ডিজিটাল আর্থিক সেবা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে। এমএফএস এবং এজেন্ট ব্যাংকিং বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০১১ সালে চালু হওয়া এমএফএস এখন জনসংখ্যার প্রায় ৫৪ শতাংশ ব্যবহার করে। ২০২৪ সাল নাগাদ গ্রামীণ জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিংয়ের সুবিধা পেয়েছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহারকারীর সংখ্যা জনসংখ্যার ৪৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলা কিউআর, বিইএফটিএন, এনপিএসবি এবং বিডি-আরটিজিএসের মতো পেমেন্ট সিস্টেমগুলো লেনদেনকে আরও দ্রুত ও নিরাপদ করেছে।