বুধবার ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ:
বিএপিএলসির সভাপতি রিয়াদ মাহমুদ, সহ-সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ ঢাবিতে চার দিনব্যাপী বিআইআইটি-আইআইআইটি উইন্টার স্কুল শুরু চলতি বছরে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জনশক্তি রপ্তানি ১০ লক্ষাধিক খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ জহুরুল ইসলামের ইন্তেকাল: বিআইআইটি-এর শোক নতুন পাঠ্যবই মুদ্রণ ও বিতরণে বিঘ্নের আশঙ্কা নেই: সালেহউদ্দিন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক শ্রম সংস্কার, বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ ফরেন এক্সচেঞ্জ বাজার স্থিতিশীল রাখতে ১৩ ব্যাংক থেকে ২০২ মিলিয়ন ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক বিজিএমইএ এর স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ সম্প্রসারণ: আরও ৪টি হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর মিরসরাইয়ের বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা কোম্পানির ১০.৩২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ

এলসি জালিয়াতি: ২২ লাখ কোটি টাকা পাচার, শীর্ষে এস আলম ও বেক্সিমকো গ্রুপ

ঢাকা: দেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাত থেকে ঋণপত্র (এলসি) জালিয়াতি ও অন্যান্য পন্থায় ২২ লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থ পাচার হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার করেছে এস আলম গ্রুপ, এরপরই রয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ। নাসা গ্রুপসহ অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের প্রমাণ মিলেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশ থেকে মোট ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে, যার ৭৫ শতাংশই আমদানি ও রপ্তানির আড়ালে হয়েছে। এই পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২ লাখ কোটি টাকা।বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম জানান, পাচারকারীদের চিহ্নিত করা এবং বিদেশে তাদের সম্পদের সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলেও পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

তিনি মনে করেন, আদালতের মাধ্যমে পাচারকারীদের শাস্তি না হলে এই টাকা ফেরত আনা সম্ভব নয়। যেভাবে অর্থ পাচার হয়েছে: অর্থ পাচারের জন্য রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংক কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত। অস্তিত্বহীন কোম্পানি, প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে দেখানো, এবং জালিয়াতি করা জামানতের মাধ্যমে এসব পাচার হয়েছে। এসব অপকর্মে অনেক ব্যাংক কর্মকর্তা পদোন্নতি বা সুবিধা পাওয়ার জন্য সহায়তা করেছেন।

শীর্ষে এস আলম গ্রুপ:কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে এস আলম গ্রুপের ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি ধরা পড়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এই পাচারের মূল মাধ্যম ছিল ভুয়া এলসি। গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে বোর্ড অনুমোদন ছাড়াই বিপুল পরিমাণ অর্থ সরানো হয়েছে।

বেক্সিমকো ও অন্যান্য গ্রুপ: জনতা ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো গ্রুপ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার অধিকাংশই ক্রেডিট কার্ড ও এলসির আড়ালে বিদেশে পাচার হয়েছে। নাসা গ্রুপ আমদানি-রপ্তানির আড়ালে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। এছাড়াও, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইউসিবি ব্যাংক থেকে ২ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

অন্যান্য বড় পাচারের ঘটনা: অ্যানন টেক্স গ্রুপ: জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার পুরোটাই এখন খেলাপি।

ক্রিসেন্ট গ্রুপ: জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে দেড় হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।*

বেসিক ব্যাংক: প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে, যার একটি অংশ এলসির আড়ালে পাচার করা হয়েছে।

হালমার্ক গ্রুপ: সোনালী ব্যাংক থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

বিসমিল্লাহ গ্রুপ: ৭টি ব্যাংক থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাচার করেছে ভুয়া রপ্তানি প্রকল্পের মাধ্যমে।

এনআরবি কমার্শিয়াল ও ফারমার্স ব্যাংক: ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে, যার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অর্থ পাচার রোধে এনবিআরের পদক্ষেপ: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান রাজস্ব আহরণ ও বাণিজ্য সহজীকরণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, সৎ আমদানি-রপ্তানিকারকদের অযথা হয়রানি করা যাবে না।

ভ্যাট আদায়ে যারা ফাঁকি দেয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তিনি দ্রুত বন্ডের কার্যক্রমসহ সকল কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করার এবং অডিট কার্যক্রমের গতি বাড়ানোর জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। করদাতাদের সহায়তা নিশ্চিত করতে এবং দ্রুত কর আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।