ঢাকা, ১৯ আগস্ট: ইউএস-ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইএফএফএ) সোমবার প্রকাশিত একটি ব্রিফিং নোটে বাংলাদেশের সরকারি ভবনগুলোর ছাদে এই বছরের শেষ নাগাদ ৩০০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রাকে ‘অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষী’ বলে অভিহিত করেছে।
গত ৭ জুলাই বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড এই রুফটপ সোলার প্রকল্পের ঘোষণা দেয় । আইইএফএফএ-র ব্রিফিং নোট অনুযায়ী, সরকারি অফিস, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতের সম্মিলিত চাহিদা মাত্র ১৫০০ মেগাওয়াট, যা লক্ষ্যের অর্ধেক।
নোটটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি দেশে চালু হওয়া দ্বিতীয় রুফটপ সোলার উদ্যোগ। প্রথম উদ্যোগে নতুন ভবনগুলোর জন্য জাতীয় গ্রিডের সাথে সংযোগ পেতে ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। নোট অনুসারে, সেই সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনাগুলোর মধ্যে অনেকগুলো অব্যবহৃত সম্পদে পরিণত হওয়ায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে রুফটপ সোলার সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।
আইইএফএফএ-র বাংলাদেশ বিষয়ক প্রধান জ্বালানি বিশ্লেষক এবং নোটটির লেখক শফিকুল আলম একটি মিডিয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এই ভবনগুলোতে রুফটপ সোলারের সম্ভাবনা মূল্যায়ন ও নথিবদ্ধ করা উচিত।” তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য তহবিল বরাদ্দ, টেন্ডারিং, বিডিং নথি মূল্যায়ন, ওয়ার্ক অর্ডার জারি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভবত ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের সময়সীমা বাড়ানো প্রয়োজন হবে।”
নোটটি জানায়, ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ৩০০০ মেগাওয়াট নতুন রুফটপ সোলার সক্ষমতা অর্জন করতে হলে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত স্থাপিত ২৪৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার চেয়ে ১২ গুণেরও বেশি গতিতে কাজ করতে হবে। নোটটিতে আরও বলা হয়েছে, দেশে মাত্র ১৫-২০টি উচ্চমানের ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরমেন্ট এবং কনস্ট্রাকশন (ইপিসি) কোম্পানি আছে, এবং ছয় মাসের মধ্যে ৩০০০ মেগাওয়াট স্থাপনের জন্য তাদের পর্যাপ্ত সক্ষমতা নাও থাকতে পারে।
নতুন রুফটপ সোলার কর্মসূচির আওতায়, সরকারি অফিসগুলো সরকারি তহবিলের সহায়তায় ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার (ক্যাপেক্স) মডেলের মাধ্যমে ইনস্টলেশন করবে, যখন হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কোনো অগ্রিম খরচ ছাড়াই অপারেশনাল এক্সপেন্ডিচার (ওপেক্স) মডেলের অধীনে কাজ করবে। ক্যাপেক্স মডেলের অধীনে দুর্বল সমন্বয়, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং তাড়াহুড়ো করে ডেভেলপার নির্বাচন সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বাধা হতে পারে। অন্যদিকে, ওপেক্স মডেল মান নিশ্চিত করলেও কম সঞ্চয় দেয় এবং গ্রামীণ এলাকায় লোডশেডিংয়ের কারণে আর্থিক বাধা ও ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।
শফিক বলেন, “যদি প্রকল্পগুলো ছোট এবং গ্রামীণ এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে, তবে সেগুলো ওপেক্স মডেলের অধীনে বিনিয়োগ করতে কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হতে পারে।” নোটটিতে আরও বলা হয়েছে যে ইউটিলিটিগুলোর গ্রামীণ এলাকায় লোডশেডিংয়ের সমস্যা সমাধানের একটি উপায় খুঁজে বের করা উচিত।
ব্রিফিং নোটে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে বাংলাদেশের উচিত ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া, যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশীদারিত্ব ৪৭% থেকে ৬৩% পর্যন্ত। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানের রুফটপ সোলার খাতের সাফল্য একটি উদাহরণ যে, জ্বালানি সরবরাহ সংকট এবং ব্যয়বহুল বিদ্যুতের মতো বিষয়গুলো পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। শ্রীলঙ্কা সরকার বহুপাক্ষিক সংস্থার সহায়তায় আর্থিক বাধাগুলো মোকাবিলা করে রুফটপ সোলার সম্প্রসারিত করেছিল।
একইভাবে, ভারতের রুফটপ সোলার সক্ষমতা ২০২৫ সালের মে মাসে ১৮ গিগাওয়াটের বেশি হয়েছে, যা সরকারের ধারাবাহিক নীতি ও নিয়ন্ত্রক সহায়তার ফল। শফিক সরকারের রুফটপ সোলার কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠারও আহ্বান জানান।