ঢাকা, ১২ আগস্ট : ভারত আবারও বাংলাদেশের পাটপণ্যের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এবার দেশটির স্থলবন্দরগুলো দিয়ে চার ধরনের পাটজাতীয় পণ্য আমদানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র মুম্বাইয়ের নভোসেবা সমুদ্রবন্দর দিয়েই এই পণ্যগুলো আমদানির সুযোগ রাখা হয়েছে।
গতকাল, সোমবার (১১ আগস্ট) ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নতুন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানানো হয়, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে।নতুন করে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা পণ্যগুলো হলো—
পাটের বস্তা ও ব্যাগ
পাটের তৈরি ব্লিসড ও আনব্লিসড বোনা কাপড়, এবং
দুই ধরনের পাটের সুতা কর্ডেজ দড়ি।
এই নিয়ে গত ছয় মাসে ভারত চার দফায় বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করলো। গত ১৭ মে স্থলপথে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিকসহ আরও কয়েকটি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এরপর গত ৯ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধাও প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
গত ২৭ জুন কাঁচা পাট, পাটের রোল এবং পাটের সুতাসহ কয়েকটি পণ্য স্থলপথে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।এই ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানি বড় ধরনের ধাক্কার মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ বলেন, “ভারত এরকম অশুল্ক বাধা তৈরি করতে পারে, এমন আশঙ্কা আমাদের আগে থেকেই ছিল। সে কারণে কিছু প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং মূল্য সংযোজিত ও দামি পণ্য যেন যেকোনো দেশে রপ্তানি করা যায়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ভারতের এই সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য ‘সাপে বর’ হতে পারে।এদিকে, বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সংগঠনের সভাপতি রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, “স্থলপথে কলকাতাভিত্তিক ভারতীয় আমদানিকারকদের কাছে পণ্য পৌঁছানো দুই দেশের জন্যই লাভজনক ছিল। তিন মাস আগে কিছু পণ্যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর মুম্বাই বন্দর দিয়ে পণ্য এনে সেখান থেকে কলকাতায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
এতে আমদানিকারকদের পরিবহন ব্যয় ৪ গুণ এবং সময় প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এখন আরও চারটি পণ্যে নিষেধাজ্ঞা আসায়, রপ্তানির জন্য ভারতকে বাণিজ্যিকভাবে আর লাভজনক বাজার হিসেবে ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
“তিনি আরও বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারকে লক্ষ্য করে পণ্যের বৈচিত্র্য আনা, মান উন্নয়ন এবং মূল্য সংযোজনের পরিকল্পনা নেওয়া গেলে কাঁচাপাট রপ্তানির এই সীমাবদ্ধতা দীর্ঘ মেয়াদে পাটশিল্পের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে।