কক্সবাজার: স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবিকায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমন্বিত সহায়তা পাচ্ছেন ১২ লাখেরও বেশি মানুষ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ উদ্যোগে গৃহীত “হিউম্যানিটারিয়ান-ডেভেলপমেন্ট কো-এক্সিস্টেন্স (এইচডিসি) নেক্সাস টু অ্যাড্রেস দ্য রোহিঙ্গা ক্রাইসিস ইন কক্সবাজার” প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে চলছে।
প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সমন্বিত মানবিক সহায়তা জোরদার করা। এর আওতায় ছয়টি মূল সেবা খাতে কাজ করা হচ্ছে—শেল্টার, ক্যাম্প সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনা (এস-সিসিসিএম), স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবিকা ও দক্ষতা উন্নয়ন (এলএসডি), এবং পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ)। বিশেষভাবে নারী, যুবক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
সম্পূর্ণ কার্যক্রম চালু হলে প্রকল্পটি প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রায় ২ হাজার ৫০০ মানুষকে সরাসরি উপকৃত করবে।
সম্প্রতি কক্সবাজারের ক্যাম্প-২৭ এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ক্যাম্প-ইন-চার্জ ও সিনিয়র সহকারী সচিব খঞ্জাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান। তিনি প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন।
ব্র্যাকের এইচসিএমপি উপদেষ্টা সুব্রত কুমার চক্রবর্তী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ক্যাম্প-২৭ এর সহকারী সচিব মো. শহিদুল ইসলাম মির্জা, ব্র্যাক এইচসিএমপি’র প্রোগ্রাম প্রধান আবদুল্লাহ আল রায়হান, এইচডিসি প্রকল্প ব্যবস্থাপক আফসার আলী, এফএসএসএল প্রোগ্রাম সমন্বয়ক আবদুল মালেক, প্রোটেকশন প্রোগ্রাম সমন্বয়ক মো. তানভীর ইসলাম, এসএমএস সমন্বয়ক মো. শহিদুল ইসলাম এবং শেল্টার সেক্টরের প্রধান মো. রফিকুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খঞ্জাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান বলেন,
“প্রকল্পের নকশা ও পরিকল্পনা প্রশংসনীয়। তবে এর সঙ্গে হাতির করিডোর বিবেচনা করা এবং হাতি-বান্ধব গাছ লাগানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করছি।” তিনি সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সুব্রত কুমার চক্রবর্তী বলেন, “এইচডিসি প্রকল্প কেবল ব্র্যাকের একক উদ্যোগ নয়; এটি যৌথ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। কার্যকর ও সময়মতো বাস্তবায়নই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার সাত বছর পরও কক্সবাজারে শরণার্থী ও স্থানীয় উভয় সম্প্রদায় দীর্ঘমেয়াদি মানবিক সংকটে ভুগছে। অর্থায়ন কমে আসা, সামাজিক চাপ বৃদ্ধি এবং দ্বৈত সেবা প্রদানের কারণে স্থানীয় সম্পদের ওপর চাপ বেড়েছে।
এইচডিসি প্রকল্প মধ্যমেয়াদি সমাধান হিসেবে মানবিক ও উন্নয়নমূলক উদ্যোগকে একীভূত করে দক্ষতা, জবাবদিহিতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করবে। এতে অংশগ্রহণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উভয় সম্প্রদায়কে ক্ষমতায়িত করা হবে এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে উৎসাহিত করা হবে।
প্রকল্পটি ২৪ মাসব্যাপী বাস্তবায়িত হবে কক্সবাজারের উখিয়ার রাজাপালং ও পালংখালী এবং টেকনাফের নীলার স্থানীয় জনগোষ্ঠীসহ ক্যাম্প-১ ইস্ট, ১৭, ২৬ ও ২৭-এ।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ মে ব্র্যাক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের পর আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্প শুরু হয়।