ঢাকা, ১১ মে: ব্যাংকিং খাতের চলমান সংকট নিরসনে সরকার ‘ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫’ জারি করেছে, যার গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে।
অর্ডিন্যান্সের ভূমিকায় বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশ বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও শক্তিশালী করবে, যাতে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কঠোর ও সুসংগঠিত পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
এই অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ইসলামী ব্যাংক’সহ যেকোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে।
এই লক্ষ্যে, ৬৭ পৃষ্ঠার ‘ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্স, ২০২৫’ গত শুক্রবার (৯ মে), ছুটির দিনে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে, গত ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদ অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদন করে।
নতুন বিধানে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি মালিকানাধীন যেকোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এমনকি যেকোনো ইসলামী ব্যাংককেও সাময়িকভাবে অধিগ্রহণ করতে পারবে। এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এক বা একাধিক শেয়ার হস্তান্তরের আদেশ জারি করতে পারবে।
তবে, শেয়ারের গ্রহীতা অবশ্যই সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হতে হবে।
অর্ডিন্যান্সে আরও বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যাংকের মালিক ব্যক্তিগত লাভের জন্য ব্যাংকের সম্পদ অপব্যবহার করে বা জালিয়াতির আশ্রয় নেয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক রেজোলিউশনের মাধ্যমে সেই ব্যাংকের বিরুদ্ধে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে।
প্রয়োজনে, ব্যাংকে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ, মূলধন পুনঃবিনিয়োগ, তৃতীয় পক্ষের কাছে সম্পদ ও শেয়ার হস্তান্তর এবং আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে কার্যক্রম স্থগিত করার সুযোগ থাকবে।
ব্রিজ ব্যাংক ধারণা ও অবসায়ন প্রক্রিয়া:
দুর্বল ব্যাংকের পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে একটি “ব্রিজ ব্যাংক” প্রতিষ্ঠার সুযোগ রাখা হয়েছে, যা পরবর্তীতে বিক্রিও করা যেতে পারে। যদি কোনো ব্যাংকের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার প্রয়োজন হয়, তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আদালতের মাধ্যমে অবসায়নের উদ্যোগ নিতে পারবে।
এক্ষেত্রে, অবসায়ক নিয়োগ ও দায় নিষ্পত্তির জন্য সময়সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
ব্যক্তিগত দায় ও জরিমানা:
ব্যাংকের ব্যর্থতার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দায় নির্ধারণ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে কোনো ব্যক্তির কাজ বা সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হলে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন।
এছাড়াও, অধ্যাদেশ লঙ্ঘনের জন্য ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং প্রতিদিনের লঙ্ঘনের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা জরিমানা আরোপের বিধান রাখা হয়েছে।
সংকট ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক পরিষদ:
ব্যাংকিং খাতের সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি ‘ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল’ গঠিত হবে। অন্য সদস্যরা হলেন অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বিএসইসি চেয়ারম্যান, আইন সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দুইজন ডেপুটি গভর্নর।
এই কাউন্সিল প্রতি তিন মাসে একবার বৈঠক করবে এবং জরুরি সংকট মোকাবিলার পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।