ঢাকা, ২৬ জুন: পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই)-এর সেন্টার ফর ম্যাক্রোইকোনমিক অ্যানালাইসিস (সিএমইএ) আজ অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিএফএটি)-এর সহযোগিতায় ‘মাসিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি (এমএমআই) বাজেট পরবর্তী পর্যালোচনা’র আয়োজন করে । অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক, কূটনীতিক এবং বেসরকারি খাতের নেতৃবৃন্দ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পরবর্তী আর্থিক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. খুরশিদ আলম অতিথিদের স্বাগত জানান এবং কার্যকর অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নে তথ্যভিত্তিক সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরেন । পিআরআই-এর চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) শেখ মইনউদ্দিন। ড. মঈনুদ্দিন সরকারের অবকাঠামো-নির্ভর উন্নয়ন ও সামষ্টিক স্থিতিশীলতার কৌশলগত লক্ষ্যের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের একটি সামগ্রিক অবকাঠামো পরিকল্পনা প্রয়োজন যা আমাদের বিদ্যমান সম্পদ ও ভবিষ্যত চাহিদা পূরণ করবে। কিন্তু চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন। একটি সুসংহত পরিকল্পনা সকল স্টেকহোল্ডারদেরকে একই কাঠামোর অধীনে একসাথে কাজ করতে সহায়তা করবে”।
পিআরআই-এর চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার এবং পিআরআই-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান মূল উপস্থাপনা প্রদান করেন । মূল উপস্থাপনায় ড. জাইদী সাত্তার বলেন, “বাজেটে কোনো বাণিজ্য নীতি সংস্কার করা হয়নি, যা বাংলাদেশের আগামী নভেম্বর ২০২৬-এ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন এবং ইউএসটিআর-এর পারস্পরিক শুল্কের দাবির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হারানোর সমতুল্য”। তিনি উল্লেখ করেন, “বাজেটে শুধুমাত্র প্রান্তিক প্যারাট্যারিফ হ্রাস অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা রপ্তানি বৈচিত্র্য আনতে অকার্যকর। ক্রমবর্ধমান বাহ্যিক চাপের কারণে কৌশলগত ও জরুরি বাণিজ্য সংস্কার অপরিহার্য। ইউএসটিআর-এর প্রয়োজনীয়তার সাথে সামঞ্জস্য করা বাণিজ্য নীতির আধুনিকীকরণে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। একই সময়ে, বাংলাদেশকে বাণিজ্য-ভিত্তিক করের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে রাজস্বের ভিত্তি প্রসারিত করতে হবে”। ড. আশিকুর রহমান বলেন, “রাজস্ব চাপ বাংলাদেশের সামষ্টিক ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে দুর্বল দিক। চলতি ব্যয় (যেমন সরকারি কর্মচারীদের বেতন, ভর্তুকি ও ঋণের সুদ) মেটাতেও এখন সরকারকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এই রাজস্ব সংকট ব্যাংকিং খাতের পুনঃপূরণসহ জরুরি সংস্কারেও বাধা সৃষ্টি করছে, যা অর্থনীতির সামগ্রিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে” ।
বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ান ডেপুটি হেড অব মিশন ক্লিনটন পবকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অস্ট্রেলিয়ার চলমান সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “সুশীল নীতি সংলাপের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা অংশীদারিত্ব অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিস্থাপক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। পিআরআই-এর এমএমআই-এর মতো উদ্যোগ তথ্যভিত্তিক আলোচনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ” ।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান উপস্থিত ছিলেন। উভয় প্যানেলিস্ট বাজেটকে বেসরকারি খাতের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য করার এবং ব্যবসায়িক আস্থা বাড়াতে নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্কারের ভূমিকার ওপর জোর দেন ।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে একটি উন্মুক্ত আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং রাজস্ব প্রশাসনের ডিজিটাল রূপান্তর বিষয়ে প্রাণবন্ত মতবিনিময় করেন । ড. সাত্তারের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয় । এই আলোচনা পিআরআই-এর ফেসবুক পেজে লাইভ স্ট্রিম করা হয় ।
আরও তথ্যের জন্য এবং এমএমআই প্রতিবেদনগুলি অ্যাক্সেস করতে, অনুগ্রহ করে যোগাযোগ করু