ঢাকা:দেশের দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এবং পেট্রোবাংলার বিপুল পরিমাণ অর্থ একাধিক দুর্বল ও অস্তিত্ব সংকটে থাকা বেসরকারি ব্যাংকে আটকে পড়েছে।
এই অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা এসব প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।জ্বালানি তেল ও গ্যাস বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করা এই দুই প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্বৃত্ত তহবিল বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখে।
কিন্তু গত এক দশকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে অর্থ জমা রাখতে বাধ্য করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বিপিসির ২ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে বিপিসির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির সংরক্ষিত আয়ের পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার ১৩২ কোটি টাকার স্বল্পমেয়াদি আমানত এবং ২৫ হাজার ২০৫ কোটি টাকা চলতি হিসাবে জমা আছে।বিপিসির ২ হাজার ১৯০ কোটি টাকা ১১টি বেসরকারি ব্যাংকে জমা আছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই দুর্বল। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৭০১ কোটি, মেঘনা ব্যাংকে ২৮৫ কোটি, এসবিএসি ব্যাংকে ২১৯ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংকে ২০৬ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ১৯৬ কোটি এবং এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে ১২৭ কোটি টাকা রয়েছে।বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বণিক বার্তাকে বলেন, “দুর্বল ব্যাংকগুলোতে থাকা অর্থের বিষয়ে আমরা অবগত এবং এগুলো তুলে নেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।” তিনি জানান, দৈনন্দিন কার্যক্রমে সমস্যা না হলেও বড় কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তহবিলের প্রয়োজন হলে এই অর্থ সংকট তৈরি করতে পারে।
পেট্রোবাংলার ৯১৬ কোটি টাকাও ঝুঁকিতে অন্যদিকে, পেট্রোবাংলা এখনো নিট লোকসানে থাকলেও তাদেরও ৯১৬ কোটি টাকা ১০টি দুর্বল বেসরকারি ব্যাংকে জমা আছে। এর মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংকে সবচেয়ে বেশি ৫৭০ কোটি টাকা রয়েছে। এছাড়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৯৮ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৯৬ কোটি এবং পদ্মা ব্যাংকে ৪১ কোটি টাকা জমা আছে।পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) একেএম মিজানুর রহমান জানান, যে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট রয়েছে, তাদের কাছ থেকে অর্থ পেতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
আমানত ফেরত নিয়ে অনিশ্চয়তা গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যাংক খাতের বিভিন্ন অনিয়ম সামনে আসে। গ্রাহকদের টাকা তোলার চাপে অনেক ব্যাংক চরম তারল্য সংকটে পড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি দুর্বল শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে।এসব দুর্বল ব্যাংকের ভবিষ্যত এবং তাদের আমানতকারীদের অর্থ ফেরত পাওয়ার সক্ষমতা নিয়ে বড় ধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে। বিপিসি ও পেট্রোবাংলার মতো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।