নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) জয়যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম ১৭ দিনেই দেশে ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) মার্কিন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। রেমিট্যান্সের এই শক্তিশালী প্রবাহের ওপর ভর করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
১৭ দিনে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রবাসীরা যে পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন, তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের প্রথম ১৭ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল প্রায় ১.৭৬ বিলিয়ন ডলার। বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা এবং ব্যাংকগুলোর সক্রিয় ভূমিকার কারণে এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থবছরের হিসাবে বড় লাফ
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরু থেকেই (১ জুলাই থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত) রেমিট্যান্স আসার গতি ছিল সন্তোষজনক। এই সাড়ে পাঁচ মাসে মোট ১৫.০৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১২.৮৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, অর্থবছরের হিসেবে রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রায় ১৬.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
রিজার্ভ নিয়ে সুসংবাদ
রেমিট্যান্সের এই জোয়ারের প্রভাবে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দেশের গ্রস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২.৫৭ বিলিয়ন ডলারে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি ‘বিপিএম৬’ (BPM6) অনুযায়ী, প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ এখন ২৭.৮৭ বিলিয়ন ডলার।
একই দিনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক তথ্য দেন। তিনি বলেন, “বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছরের মধ্যেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারে।”
কেন বাড়ছে রেমিট্যান্স?
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে প্রবাসীদের উৎসাহ প্রদান, ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা এবং এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধির কারণে হুন্ডির বদলে বৈধ চ্যানেলে অর্থ আসার পরিমাণ বাড়ছে। এর ফলে দেশের ডলার সংকট যেমন কাটছে, তেমনি শক্তিশালী হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনীতি।