বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকা: দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতকারীদের সুরক্ষা জোরদার করতে এবং জনআস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে ।
সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরিস্থিতিতে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার গুরুত্ব বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে এই অধ্যাদেশটি প্রণয়ন করেন । এর মাধ্যমে যুগোপযোগী কাঠামোর অধীনে নতুন আইন কার্যকর হলো, যা ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০ কে রহিত করেছে ।
রবিবার (২৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স বিভাগ থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানানো হয়েছে ।
অধ্যাদেশের মূল উদ্দেশ্য ও কাঠামো
অধ্যাদেশটির মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যাংক কোম্পানি এবং ফাইন্যান্স কোম্পানিতে আমানত রাখা ব্যক্তিদের সুরক্ষিত আমানত ফেরত নিশ্চিত করা ।
- নতুন বিভাগ: সুরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় একটি পৃথক আমানত সুরক্ষা বিভাগ গঠন করা হবে । এই বিভাগ নিয়মিত প্রিমিয়াম সংগ্রহ, তহবিল ব্যবস্থাপনা, সদস্য প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, আমানত পরিশোধ এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবে ।
- স্বতন্ত্র তহবিল: নতুন আইনে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির জন্য দুটি স্বতন্ত্র আমানত সুরক্ষা তহবিল গঠনের নির্দেশনা রয়েছে । সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া প্রিমিয়াম, জরিমানা, বিনিয়োগ আয় ও অন্যান্য অনুমোদিত উৎস থেকে এই তহবিল পরিচালিত হবে ।
- ট্রাস্টি বোর্ড: তহবিলের প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, যা ‘ট্রাস্টি বোর্ড’ হিসেবে বিবেচিত হবে ।
সদস্যপদ এবং প্রিমিয়াম
- ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানি: নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিকে নির্ধারিত হারে প্রারম্ভিক প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে । বিদ্যমান সব ব্যাংক কোম্পানি এই আইনের অধীনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সদস্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে । অন্যদিকে, ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো ২০২৮ সালের ১ জুলাই থেকে সদস্যপদে অন্তর্ভুক্ত হবে ।
- প্রিমিয়াম: অধ্যাদেশে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ঝুঁকি-ভিত্তিক প্রিমিয়াম আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে ।
সুরক্ষার আওতা
সাধারণ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আমানত ‘সুরক্ষাযোগ্য’ হিসেবে গণ্য হবে এবং নির্ধারিত সীমার মধ্যে এসব আমানত সুরক্ষিত থাকবে । তবে সরকারি, বিদেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার আমানতসহ কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণির আমানতকে সুরক্ষা বহির্ভূত ঘোষণা করা হয়েছে ।
ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানির অবসায়ন বা রেজল্যুশনের ক্ষেত্রে আমানত সুরক্ষা বিভাগ সরাসরি সুরক্ষিত আমানত পরিশোধ করবে । প্রয়োজনে রেজল্যুশন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্রিজ ব্যাংক বা তৃতীয় পক্ষের কাছে সম্পদ হস্তান্তর ও আমানত সুরক্ষা প্রক্রিয়াও পরিচালিত হতে পারবে ।
এই আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে দেশি-বিদেশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই, তথ্য বিনিময়, কারিগরি সহযোগিতা গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে আমানত সুরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে ।
সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন আইন কার্যকর হওয়ায় দেশের আর্থিক খাতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সংকট মোকাবেলার সক্ষমতা বাড়বে এবং আমানতকারীরা আরও অধিক সুরক্ষা পাবেন ।