বুধবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ:
খালেদা জিয়াকে ভিভিআইপি ঘোষণার সিদ্ধান্ত ডিভাইস শিল্পের বিনিয়োগ সুরক্ষা দেবে সরকার : ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বাজারে আসছে নতুন ৫০০ টাকার নোট, বৃহস্পতিবার থেকেই পাওয়া যাবে জননিরাপত্তা জোরদারে ডিজিটাল ও কমিউনিটি কৌশল গ্রহণের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশ আমদানি বন্ধ রাখায় বিপাকে ভারত, সীমান্তে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ২ রুপিতে! দেশের অর্থনীতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি, কাজ করার সুযোগ আছে: বাণিজ্য সচিব অবৈধ মাছ ধরা বন্ধে বৈশ্বিক সহযোগিতা জরুরি: মৎস্য উপদেষ্টা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর অনুকূল পরিবেশ তৈরির তাগিদ ইইউর শাহরুখ খানের মার্কশিট ভাইরাল: কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছিলেন বলিউড বাদশা?

লালমনিরহাটে ‘নবান্নের’ স্পন্দন এখন কেবল স্মৃতিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: একসময় গ্রামীণ বাঙালি সংস্কৃতির এক প্রাণবন্ত উৎসব ছিল ঐতিহ্যবাহী ‘নবান্ন উৎসব’। প্রথম ফসল ঘরে তোলার এই উৎসবটি ধীরে ধীরে লালমনিরহাটের অনেক গ্রাম থেকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বাংলা মাস হেমন্ত শেষ হয়ে শীতের আগমনী স্পর্শের সাথে সাথে জেলার কৃষকরা এখন আমন ধান কাটায় ব্যস্ত। দিগন্তজুড়ে সোনালী ধানের ক্ষেত এখনও নতুন শস্যের পরিচিত সুগন্ধ বহন করছে, কিন্তু যে উৎসবের আমেজ একসময় এই ঋতুকে চিহ্নিত করত, তা এখন আর খুব কমই চোখে পড়ে।

গ্রামবাসীরা জানান, ফসল তোলার আনন্দ এখনও অক্ষুণ্ণ থাকলেও নতুন ধান থেকে তৈরি প্রথম রান্না করা চাল ভাগ করে নেওয়ার সেই সাম্প্রদায়িক চেতনা—যা ‘নবান্ন উৎসবের’ মূল বৈশিষ্ট্য ছিল—তা অনেকটাই কমে গেছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার শিয়ালখোয়া গ্রামের এসএসসি শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমরা বাবা-মায়ের কাছে শুনেছি, একসময় দিনটি কতই না উৎসবমুখর ছিল। মানুষজন একে অপরের বাড়িতে নতুন চালের ভাত খেতে যেত। কিন্তু এখন আমরা তেমন কোনো প্রচলন দেখি না।”

অতীতের আনন্দ ও উৎসবের স্মৃতিচারণ করে আদিতমারী উপজেলার ৭০ বছর বয়সী কৃষক শফিক মিয়া বলেন, “৩০ বছর আগে আমরা গরিব ছিলাম, কিন্তু নতুন ফসলের আনন্দ ছিল অনেক বেশি। আমরা পিঠা, পোলাও তৈরি করতাম এবং ইমামদের কাছে প্রথম চাল উৎসর্গ করার পর প্রতিবেশীদের সাথে তা ভাগ করে খেতাম। এখন আয় বেড়েছে, কিন্তু আনন্দ কমেছে। নতুন প্রজন্ম ‘নবান্ন’ আসলে কী, তা জানেও না।”

জমিতে ধান শুকাতে থাকা কৃষক জমির আলীও একইরকম স্মৃতি ভাগ করে নেন। তিনি বলেন, “আমরা নতুন চাল থেকে ভাত রান্না করে আশীর্বাদ চাওয়ার জন্য মসজিদের ইমামকে প্রথম থালা দিতাম। আমরা দোয়া করতাম এবং একসাথে খেতাম। সেই ঐতিহ্য এখন প্রায় বিলুপ্ত।”

আরেকজন প্রবীণ গ্রামবাসী ছালেহা বেগম বলেন, মানুষ একসময় ঐতিহ্যকে সম্মান করত এবং একতাকে মূল্য দিত। “আমরা নতুন চাল রান্না করে দরজার সামনে রাখতাম এবং মিলাদের জন্য মৌলভিকে আমন্ত্রণ জানাতাম। এখন আর কেউ তা করে না। সময় বদলে গেছে, আর আমাদের সংস্কৃতিও বদলে গেছে,” তিনি বলেন।

দুহুলী এসসি হাই স্কুলের শিক্ষক বাদশা গোলাম রাব্বানী বলেন, একসময় এই উৎসব একটি আনন্দময় সামাজিক পরিবেশ তৈরি করত। তিনি জানান, তাদের শৈশবে তারা দল বেঁধে বিভিন্ন বাড়িতে যেতেন এবং নতুন চালের খাবার উপভোগ করতেন। “আজকের শিশুরা উৎসবের নাম শুধু জানে; এর আসল মর্ম তারা অনুভব করতে পারে না।”

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোজাকের নোমান বলেন, ধান কাটা শুরু হয়েছে এবং কিছু কৃষক এখনও সহজভাবে ‘নবান্ন’ পালন করছেন। তিনি বলেন, “অনেক কৃষক নতুন চাল থেকে পিঠা, পুলি ও পায়েস তৈরি করে উদযাপন করছেন।”

এমন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, গ্রামবাসী ও সংস্কৃতি পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন যে বাংলার অন্যতম প্রাচীন কৃষি ঐতিহ্য বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে, যদি না সম্মিলিতভাবে এই ফসলের উৎসব পালনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়।