নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক এপিএম টার্মিনালস বিভি (APM Terminals BV)-এর সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন
- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, শিপিং উপদেষ্টা (প্রধান অতিথি)
- লিনা গ্যান্ডলোসে হ্যানসেন, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি
- ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার, বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত
- রবার্ট মার্স্ক উগলা, মার্স্ক বোর্ডের চেয়ারম্যান
- চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির (পিপিপিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সভাপতি)
৬,৭০০ কোটি টাকার প্রাথমিক বিনিয়োগ
ড্যানিশ শিপিং জায়ান্ট এপি মোলার – মার্স্ক-এর একটি ইউনিট হলো এপিএম টার্মিনালস। এই চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠানটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কাঠামোর অধীনে ৩০ বছরের জন্য টার্মিনালটির নকশা, অর্থায়ন, নির্মাণ এবং পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে।
- এপিএম টার্মিনালস আগামী তিন বছরে নির্মাণ, সরঞ্জাম স্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যয় বাবদ প্রাথমিকভাবে ৫৫০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৬,৭০০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করবে।
- এই বিনিয়োগকে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত একক বৃহত্তম ইউরোপীয় ইক্যুইটি বিনিয়োগগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
- চুক্তির সূচনা হিসেবে এপিএম টার্মিনালস সিপিএকে ২৫০ কোটি টাকা ‘সাইনিং মানি’ হিসেবে পরিশোধ করবে।
২০২৮-২০৩০ সালের মধ্যে কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্য
মার্স্ক বোর্ডের চেয়ারম্যান রবার্ট মার্স্ক উগলা অনুষ্ঠানে জানান, লালদিয়া টার্মিনালটি ২০২৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, বন্দর সুবিধার মালিকানা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতেই থাকবে।
রাজস্ব ভাগাভাগি মডেল
চুক্তিটিতে একটি রাজস্ব ভাগাভাগি মডেল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য আর্থিক লাভ নিশ্চিত করবে:
- প্রতি টিইইউ (টুয়েন্টি-ফুট ইকুয়িভালেন্ট ইউনিট) কনটেইনার হ্যান্ডলিং-এর জন্য এপিএম টার্মিনালস সিপিএকে ২১ ডলার দেবে।
- যদি বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ৯,০০,০০০ টিইইউ ছাড়িয়ে যায়, তবে এই হার বেড়ে ২৩ ডলার হবে।
- হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি হলে এই হার ক্রমান্বয়ে কিছুটা কমবে।
পিপিপিএ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, এই রাজস্ব মডেল এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে সিপিএকে কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হতে না হয়। একবার চালু হলে নতুন এই টার্মিনালটি বন্দরের বার্ষিক হ্যান্ডলিং সক্ষমতায় ৮,০০,০০০ টিইইউ-এর বেশি কনটেইনার যোগ করবে, যা বন্দরের যানজট কমাতে এবং সামগ্রিক দক্ষতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের সামুদ্রিক লজিস্টিকস খাতকে আধুনিকীকরণ করতে উন্নত বন্দর প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক সর্বোত্তম অনুশীলন প্রবর্তন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।