নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা : নিজেদের প্রধান কার্যালয়গুলোর আধুনিকায়ন এবং নিরাপত্তা জোরদার করার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক (BB) গ্রাহক পর্যায়ের সঞ্চয়পত্র এবং প্রাইজবন্ড বিক্রি সহ মোট পাঁচটি সেবা বন্ধ করে দিচ্ছে।
আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। পর্যায়ক্রমে ঢাকার বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভাগীয় অফিসগুলোতেও এসব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।
🛑 যে পাঁচটি সেবা বন্ধ হচ্ছে
বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহক পর্যায়ে যে পাঁচটি সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলো হলো:
- সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বিক্রি।
- গ্রাহক পর্যায়ে ছেঁড়া-ফাটা নোট বদল।
- সরকারি ট্রেজারি চালান (জমা) সেবা।
- চালান সংক্রান্ত লেনদেনের জন্য ভাংতি টাকা দেওয়া।
🏦 বাণিজ্যিক ব্যাংকে সেবা মিলবে
বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্ট করেছে যে, সাধারণ গ্রাহকরা এই সব পরিষেবা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শাখা থেকে আগের মতোই পাবেন। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে নির্বিঘ্নে এসব সেবা দিতে পারে, তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকিও বাড়াবে।
এই বিষয়ে জনসাধারণকে জানাতে শীঘ্রই একটি প্রচারণা চালানো হবে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে এরই মধ্যে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
🛡️ সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণ: নিরাপত্তা ও আধুনিকায়ন
মতিঝিল অফিসের ক্যাশ বিভাগ পরিদর্শনের পর গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এর নির্দেশনায় একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ‘কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন (KPI) নিরাপত্তা নির্দেশিকা’ অনুযায়ী উচ্চ নিরাপত্তা স্তরভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ভবনে সাধারণ মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে, সম্প্রতি সঞ্চয়পত্র সার্ভারে জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও, গ্রাহক সেবা বন্ধের সিদ্ধান্তটি শুধুমাত্র ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়নি, বরং এটি বৃহত্তর নিরাপত্তা ও আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ার অংশ।
📊 মতিঝিল অফিসের কার্যক্রমে পরিবর্তন
বর্তমানে মতিঝিল অফিসে ১০ ধরনের সরকারি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পর্কিত সেবা দেওয়া হয় ২৮টি কাউন্টারের মাধ্যমে। ৩০ নভেম্বরের পর:
- বন্ধ হতে যাওয়া ৫টি সেবার জন্য নির্ধারিত ১২টি কাউন্টার বন্ধ হয়ে যাবে।
- নগদ টাকায় সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড কেনাবেচা বা সরকারি ট্রেজারি চালান জমা নেওয়া হবে না।
- কেবল ১৬টি কাউন্টার চালু থাকবে, যেখানে নিম্নলিখিত কিছু সেবা পাওয়া যাবে:
- ধাতব মুদ্রা বিনিময়।
- স্মারক মুদ্রা বিক্রি।
- অপ্রচলিত নোটের বিরোধ নিষ্পত্তি।
- ব্যাংকের সাথে লেনদেন ইত্যাদি।
তবে, ভবিষ্যতে এই সেবাগুলোও কীভাবে ধীরে ধীরে বন্ধ করা যায়, সে বিষয়েও গভর্নর চূড়ান্ত নির্দেশনা দিয়েছেন।
📉 সঞ্চয়পত্রের বিপুল নির্ভরতা
গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, গ্রাহকদের কাছে মোট ৩,৪০,০৪৪.৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে, যার ৩০ শতাংশের বেশি বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের মাধ্যমেই সংরক্ষিত। এটি এই সেবার প্রতি সাধারণ মানুষের উচ্চ আস্থা ও নির্ভরতাকে নির্দেশ করে।
বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংক (রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি), জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর এবং পোস্ট অফিস থেকেও সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড কেনা ও ভাঙানো যায়। এখন থেকে গ্রাহকদের এই চ্যানেলগুলোর মাধ্যমেই লেনদেন সম্পন্ন করতে হবে।