ঢাকা, নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সাথে গতকাল সোমবার জাপান টেক্সটাইল ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (জেটিআইএ) একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠকে জাপানি ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে উচ্চমূল্যের, ফ্যাশনেবল পোশাক আমদানির বিষয়ে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
জাপান টেক্সটাইল ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদলে ছিলেন:
তোশিনা কাওয়াই (Toshinao Kawai), সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, এমএন ইন্টার-ফ্যাশন লিমিটেড; ইসেই নোজাওয়া (Issei Nozawa), আন্তর্জাতিক লজিস্টিকস সেকশন, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট, লাইফস্টাইল বিজনেস ডিভিশন, কোয়া কোম্পানি লিমিটেড; শিঙ্গো ইগামী (Shingo Igami), জেনারেল ম্যানেজার, ওভারসিজ অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট, তোয়োশিমা অ্যান্ড কোং লিমিটেড; নোরিহিরো কোমিয়া (Norihiro Komiya), ম্যানেজিং ডিরেক্টর, দ্য জাপান টেক্সটাইলস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং মিনামি কোজিরো (Minami Kojiro), ম্যানেজার, ওসাকা সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট নং-২ সেকশন-২, এআইটি কর্পোরেশন।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে বিজিএমইএ এর পক্ষ থেকে আলোচনায় আরও অংশগ্রহন করেন সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান (বাবলু), সহ-সভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, পরিচালক নাফিস- উদ- দৌলা, পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, পরিচালক ফাহিমা আক্তার, পরিচালক জোয়ারদার মোহাম্মদ হোসনে কমার আলম, পরিচালক রুমানা রশীদ এবং পরিচালক মোহাম্মদ সোহেল।
বৈঠকে দ্বি-পাক্ষিক বানিজ্য বৃদ্ধি, বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে জাপানে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধিতে উভয় পক্ষ কিভাবে একসাথে কাজ করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এখন কৌশলগতভাবে বাজার বহুমুখীকরণের উপর জোর দিয়েছে এবং এক্ষেত্রে জাপান বাংলাদেশের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় বাজার ।
তিনি বলেন, পোশাক শিল্প এখন মৌলিক কটনভিত্তিক পণ্য থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সিনথেটিক ফেব্রিক্স এবং টেকনিক্যাল টেক্সটাইল ভিত্তিক পোশাকে স্থানান্তরের মাধ্যমে পণ্যের অফারকে উচ্চ-মূল্যের বিভাগে নিয়ে যাওয়ার জন্য একনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
তিনি জাপানি ক্রেতাদের প্রতি বাংলাদেশ থেকে পোশাক সোর্সিং বাড়ানোর জন্য আহবান জানান।
বৈঠকে জেটিআইএ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স এবং শ্রমিকের নিরাপত্তা ও কল্যান নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন।
তারা বলেন, উচ্চমানের পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায়, জাপানের ক্রেতারা এখন উচ্চমূল্যের এবং ফ্যাশনেবল পণ্যের জন্য বাংলাদেশকে একটি সোর্সিং গন্তব্য হিসেবে আস্থায় নিয়েছেন।
আলোচনায় সাপ্লাই চেইনকে আরও মসৃণ ও দ্রুততর করার উপায়গুলো গুরুত্ব সহকারে উঠে আসে। জেটিআইএ প্রতিনিধিদল বিশেষ করে উল্লেখ করেন যে, জাপানি ক্রেতারা সংক্ষিপ্ততম লিড টাইমের মধ্যে পণ্য আমদানির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। লিড টাইম হ্রাসের সুবিধার্থে, তারা বাংলাদেশের কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালন দক্ষতা আরও বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দেন।
বিজিএমইএ নেতারা জাপানে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণের জন্য জেটিআইএ প্রতিনিধিদলের সহযোগিতা কামনা করেন। এর প্রত্যুত্তরে প্রতিনিধিদলটি জানান যে তারা বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই জাপান সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
বিজিএমইএ এর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বাজার প্রবণতা সংক্রান্ত তথ্য ও গবেষণা শেয়ার করা জন্যও প্রতিনিধিদলটিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বৈঠকে পোশাক রপ্তানিতে মার্কিন শুল্কের প্রভাব, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন এর সম্ভাব্য প্রভাবসহ পোশাক শিল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উভয় পক্ষ আলোচনা করেন।
বিজিএমইএ সভাপতি জনাব মাহমুদ হাসান খান ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, উত্তরণের পরেও শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য জেটিআইএ এর মাধ্যমে জাপান সরকারের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানান। তিনি মত প্রকাশ করেন যে, এই সুবিধাটি ইপিএ অথবা পিটিএ এর মতো একটি পারস্পরিকভাবে লাভজনক কাঠামোর মাধ্যমে নিশ্চিত করা যেতে পারে।
বৈঠকে উভয় সংগঠনই পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখা এবং জাপানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়াতে একসাথে কাজ করার বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করেন।