ঢাকা : ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি (আইবিবিএল) বর্তমানে এসব আলম গ্রুপের অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ করা অদক্ষ জনবল নিয়ে এক অভ্যন্তরীণ সংকটে পড়েছে। গত সাত বছরে ‘অনিয়মিতভাবে’ নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষা না দিয়ে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে ।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)-এর মাধ্যমে এই পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়। তবে বিপুল সংখ্যক কর্মী পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শৃঙ্খলার স্বার্থে অনুপস্থিতদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দাপ্তরিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
ব্যাপক অনিয়মিত নিয়োগ ও দুর্নীতির অভিযোগ ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রায় ২১ হাজার কর্মীর এই ব্যাংকটিতে এস. আলম গ্রুপ ২০১৭ সালে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত কোনো জাতীয় পত্রিকায় সার্কুলার ছাড়াই গোপনে বিভিন্ন পদমর্যাদায় ৭,২২৪ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। সমালোচকরা অভিযোগ করেছেন, এই নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ৪,৫০০ জনেরও বেশি শুধুমাত্র চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা থেকে নেওয়া হয়েছে, যার ফলে দেশের ৬৩টি জেলার যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন এবং ব্যাংকের শৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে।
আরও অভিযোগ উঠেছে, এস. আলমের ব্যক্তিগত সহকারী আকিজ উদ্দিনসহ তার সহযোগীরা এই নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রত্যেক কর্মকর্তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেও উঠে এসেছে।
জাল সার্টিফিকেট ও অসদাচরণ জানা যায়, নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রায় ২,৫০০ জন চট্রগ্রামের বিজিসি ট্রাস্ট, পোর্ট সিটি এবং সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর জাল সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিজিসি ট্রাস্ট ও পোর্টসিটিতে যাচাইয়ের জন্য যোগাযোগ করলে তারা অস্বীকার করে। এই কর্মকর্তারা গ্রাহক সেবার মান কমানো, পেশাগত অদক্ষতা ও অসদাচরণের পাশাপাশি গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের মতো ঘটনায়ও জড়িত বলে তদন্তে উঠে এসেছে। পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে হুমকি ও আতঙ্ক কর্মকর্তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রমাণের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আইবিএ-এর মাধ্যমে ২৭ সেপ্টেম্বর বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষার আয়োজন করে।
মোট ৫,৩৮৫ জন কর্মকর্তার পরীক্ষায় বসার কথা থাকলেও, মাত্র ৪১৪ জন অংশ নেন। অভিযোগ করা হয়েছে, একদল অসাধু কর্মকর্তা যোগ্য পরীক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে টেলিফোনে প্রাণনাশের হুমকি, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া এবং হাত-পা ভেঙে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছিল।
পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া কর্মীদের একটি দল ২৮ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের পটিয়া শাখায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ইসলামী ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য চলমান পরিস্থিতি এবং কর্মকর্তাদের ‘অপপ্রচারের’ পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে। ব্যাংক নিশ্চিত করেছে যে, কয়েকজন কর্মকর্তা এই পরীক্ষার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিলেন। তবে হাইকোর্ট বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে (বিবি) নির্দেশনা দেয়।
এরপর BB-এর ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (ডিভিশন-২) স্পষ্ট জানিয়ে দেয়: “ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি একটি বেসরকারি মালিকানাধীন লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায়, দেশের প্রচলিত আইন, বিধি-বিধান ও নিয়োগের শর্ত মেনেই কর্মীদের চাকরি এবং কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের মাধ্যমে চাকরিতে কাউকে রাখা বা না রাখার সিদ্ধান্ত ব্যাংকের নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত।”
ইসলামী ব্যাংক জোর দিয়ে বলেছে, আইবিএ-এর মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়ায় আদালত অবমাননা বা আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। তারা শরিয়াহ-কমপ্লায়েন্ট ব্যাংক হিসেবে সকল নিয়মাচার মেনে চলছে এবং অনিয়মিতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের ‘মিথ্যা প্রচারে’ গ্রাহক ও শুভানুধ্যায়ীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।