ঢাকা : দেশের আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা বাড়াতে বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ, যার মধ্যে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটও অন্তর্ভুক্ত, সেই তথ্য ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) ডাটাবেজে রিপোর্ট করা বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দেশের সকল তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কাছে এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই নতুন নির্দেশনাটি চলতি বছরের নভেম্বর মাস থেকে কার্যকর হবে।
বৈদেশিক ঋণ অন্তর্ভুক্তির কারণ
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বর্তমানে বৈদেশিক ঋণের তথ্য সিআইবি ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত না থাকায় ঋণগ্রহীতার প্রকৃত ঋণের বোঝা সিআইবি রিপোর্টে প্রতিফলিত হয় না। ফলে কোনো প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলেও স্থানীয়ভাবে নতুন ঋণ সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থেকে যায়।
সিআইবি ডাটাবেজে বৈদেশিক ঋণের তথ্য অন্তর্ভুক্তির ফলে যে সুবিধাগুলো হবে:
- স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি: ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও বাড়বে।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত: ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (NBFI)গুলো ঋণ অনুমোদনের আগে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই ও ঝুঁকি নিরূপণ আরও দক্ষতার সঙ্গে করতে পারবে।
- আন্তর্জাতিক আস্থা বৃদ্ধি: দেশের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং উন্নত হওয়ার পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারী ও আন্তর্জাতিক সংস্থার আস্থা অর্জনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
রিপোর্টিংয়ের নির্দেশনাসমূহ
সার্কুলারে ব্যাংকগুলোর জন্য বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট রিপোর্টিংয়ের আবশ্যকতা উল্লেখ করা হয়েছে:
- সব ধরনের বৈদেশিক ঋণ: বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) বা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত সকল বৈদেশিক ঋণের তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে রিপোর্ট করতে হবে। এমনকি যেসব বৈদেশিক ঋণ সুবিধার জন্য BIDA বা BB-এর অনুমোদনের প্রয়োজন নেই, কিন্তু ব্যাংকের জন্য কোনো দায় সৃষ্টি করে না, সেগুলোর তথ্যও দিতে হবে।
- সংশ্লিষ্ট পক্ষ: ঋণগ্রহীতার পাশাপাশি পরিচালক, ২০ শতাংশের বেশি শেয়ারধারী এবং গ্যারান্টারসহ সকল সংশ্লিষ্ট পক্ষের তথ্য রিপোর্ট করতে হবে।
- মুদ্রা ও কর্তৃপক্ষের তথ্য: ঋণের তথ্য অনুমোদিত বৈদেশিক মুদ্রায় রিপোর্ট করতে হবে। এছাড়া, বকেয়া এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ সমপরিমাণ মার্কিন ডলারেও রিপোর্ট করতে হবে। পাশাপাশি, বিদেশি ঋণদাতার নাম, ঠিকানা ও দেশ এবং স্থানীয় অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের (যেমন: BIDA, BB-FEID বা BB-FEPD) নাম উল্লেখ করতে হবে।
- সময়সীমা: ১ নভেম্বর থেকে শুরু করে অক্টোবর-২০২৫ পর্যন্ত এবং পরবর্তী সকল ঋণের তথ্য মাসিক ভিত্তিতে রিপোর্ট করতে হবে। নতুন ঋণ, সমন্বয় বা যেকোনো পরিবর্তন ‘রিয়েল টাইম’ ভিত্তিতে সিআইবি ডাটাবেজে রিপোর্ট করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।