ঢাকা: বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও এর প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি।
উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ খেলাপি হওয়ার প্রবণতা কম থাকা সত্ত্বেও তারা অর্থায়ন সংকটে ভুগছেন।বর্তমানে দেশে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশ অবদান রাখে।
এই খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ঋণ পান এবং উচ্চ সুদে তা পরিশোধ করতে হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান অনানুষ্ঠানিক হওয়ায় তারা ব্যাংকিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।
বিশেষ বরাদ্দের অনুরোধ-এই সংকট মোকাবিলায় এসএমই ফাউন্ডেশন অর্থ উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়ে এই খাতের জন্য বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, “এসএমই খাতে ঋণ খেলাপির সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি, এরপরও উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ প্রাপ্তিই বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা অর্থ উপদেষ্টাকে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি এবং আশা করি তিনি আমাদের প্রস্তাব বিবেচনা করবেন।”
তিনি আরও বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই শিল্প খাতে ঋণ দিতে উৎসাহী নয়। অথচ যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন, তাদের আবার ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এই ব্যবস্থার অবসান হওয়া দরকার। এসএমই খাত শক্তিশালী হলে দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে এবং দারিদ্র্য কমবে।”
নীতিগত পদক্ষেপ জরুরি-বিশেষজ্ঞদের মতে, এসএমই খাতকে আরও শক্তিশালী করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে: সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ জামানতবিহীন ঋণ প্রদান বাধ্যতামূলক করা।* ঋণ প্রক্রিয়া সহজ করা। নীতিগতভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং সেবা চালু করা। ডিজিটাল রেকর্ড ও ক্রেডিট স্কোরিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা। ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চালু করা।
নতুন নীতিমালা ও বাস্তবতা-চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নতুন মাস্টার সার্কুলার জারি করেছে, যেখানে ২০২৯ সালের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে তাদের মোট ঋণের কমপক্ষে ২৭ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে বরাদ্দ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। তবে, খাত সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন কম, যার ফলে সম্ভাবনাময় এই খাত পিছিয়ে পড়ছে।
সাকিফ শামীম বলেন, “এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ এবং ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়াও, ৫ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা এবং পৃথক ভ্যাট, আয়কর ও শুল্ক বিধি প্রণয়ন করা যেতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, জেলাভিত্তিক পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ‘এক জেলা এক এসএমই পণ্য’ উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং হস্তশিল্প, কুটির শিল্প ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের বিকাশে এসএমই খাতের ওপর সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।