মঙ্গলবার ৩ জুন, ২০২৫
সর্বশেষ:
আইসিএবি বাজেটের কৌশলগত পদ্ধতিকে অভিনন্দন জানিয়েছে, ‘ক্যাশলেস কোম্পানি’ কর পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে FICCI কিছু বাজেট পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে এবং কর বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাজেট ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ: ঢাকা চেম্বার বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫.৬৪ লক্ষ কোটি টাকা, ঘাটতি ২.২৬ লক্ষ কোটি টাকা নতুন বাজেটে মোবাইল ও ইন্টারনেটের খরচ কমবে বাজেটে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়েছে বাজেটে ব্যাংক আমানতের উপর আবগারি শুল্ক অব্যাহতি ৩.০ লক্ষ টাকায় উন্নীত বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরতা বৃদ্ধি করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক ছয়টি নতুন নোটের ছবি প্রকাশ করেছে

বৈশ্বিক কর্মসংস্থান পূর্বাভাস : ২০২৫ সালে ৭০ লক্ষ চাকরি কমে যাওয়ার আশঙ্কা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on print

ঢাকা, মে ২৮: আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) তাদের সর্বশেষ “ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট এন্ড সোশ‌্যাল আউটলুক” (WESO) প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্য বিঘ্নিত হওয়ার কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, যার ফলে চাকরির বৃদ্ধির গতি পেয়েছে।

জেনেভা (আইএলও নিউজ) – ২০২৫ সালের জন্য বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের পূর্বাভাস এখন ৬ কোটির পরিবর্তে কমে ৫কোটি ৩০ লক্ষে নেমে এসেছে। ফলে চাকরি বৃদ্ধির হার ১.৭ শতাংশ থেকে কমে ১.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ পূর্বাভাসের তুলনায় প্রায় ৭০ লক্ষ কম নতুন চাকরি সৃষ্টি হবে। জিডিপি বৃদ্ধির হার পূর্বাভাস অনুযায়ী ৩.২ শতাংশ থেকে কমে ২.৮ শতাংশ হয়েছে।

এই অনুমানগুলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) এপ্রিল ২০২৫ বিশ্ব অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে করা হয়েছে।

ILO আরও জানিয়েছে, ৭১টি দেশে প্রায় ৮ কোটি ৪০ লক্ষ চাকরি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে মার্কিন ভোক্তা চাহিদার ওপর নির্ভরশীল। এই চাকরিগুলো এখন বাণিজ্যিক উত্তেজনার কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে এর মধ্যে ৫ কোটি ৬০ লক্ষ চাকরি রয়েছে। তবে কানাডা ও মেক্সিকোতে সর্বোচ্চ অনুপাতে (১৭.১%) চাকরি এই ঝুঁকিতে রয়েছে।

ILO মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ. হুংবো বলেন,

“আমরা জানি, বৈশ্বিক অর্থনীতি আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে ধীর গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্য বিঘ্ন অব্যাহত থাকে এবং যদি আমরা শ্রমজগতের পরিবর্তনশীল বাস্তবতাগুলোর মোকাবিলায় ব্যর্থ হই, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব শ্রমবাজারে অনিবার্য।”

তিনি আরও বলেন,

“এই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব – সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করে, দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করে, সামাজিক সংলাপ উন্নীত করে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রমবাজার গড়ে তুলে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সুফল সবাইকে পৌঁছে দিয়ে।”

আয় বণ্টনে বৈষম্য

প্রতিবেদনটি উদ্বেগজনক এক বৈশ্বিক প্রবণতা তুলে ধরে – শ্রম আয়ের অংশ (GDP-র যে অংশ শ্রমিকদের হাতে যায়) ২০১৪ সালে ৫৩.০ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে ৫২.৪ শতাংশে নেমে এসেছে। আফ্রিকা ও আমেরিকায় এ পতন সবচেয়ে বেশি। যদি এই অনুপাত অপরিবর্তিত থাকতো, তবে ২০২৪ সালে শ্রম আয় বিশ্বব্যাপী আরও এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি হতো – প্রতি শ্রমিকের জন্য এটি প্রায় ২৯০ ডলার অতিরিক্ত আয় হতো (স্থিতিশীল ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায়)। এ অবনমন বৈষম্য বৃদ্ধি করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে শ্রমিকদের আয়ের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে তোলে।

উচ্চদক্ষতা সম্পন্ন কর্মসংস্থানের প্রবণতা ও নারীর অংশগ্রহণ

প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্মসংস্থান এখন উচ্চদক্ষতা সম্পন্ন পেশার দিকে ধাবিত হচ্ছে, যেখানে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে নারীদের এধরনের পেশায় অংশগ্রহণ ২১.২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩.২ শতাংশ হয়েছে, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এ হার ২০২৩ সালে ছিল প্রায় ১৮ শতাংশ। তবুও পেশাগত বিভাজন রয়ে গেছে – নারীরা নির্মাণ খাতে কম এবং প্রশাসনিক ও সেবামূলক পেশায় বেশি নিয়োজিত।

বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা

বাংলাদেশের ILO’র বিদায়ী কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিআইনেন বলেন,

“চাকরির বৈশ্বিক সংকোচন অত্যন্ত উদ্বেগজনক, বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য – যা একাধারে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিবছর ১০ লাখেরও বেশি কর্মী বিদেশে পাঠায়। এই প্রতিবেদন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, নারী ও তরুনদের জন্য উপযুক্ত কাজের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি অবহেলা করা যাবে না। ডিজিটাল ও উচ্চদক্ষতা সম্পন্ন পেশার চাহিদা বাড়বে বলে পূর্বাভাস, তাই বাংলাদেশের জন্য এখনই দক্ষতা উন্নয়নের সংস্কার বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি – যেন দেশের ও বিদেশের বাজারে ভালো মজুরি-সুবিধার কাজের জন্য প্রস্তুত হওয়া যায়।”

শিক্ষাগত অমিল

যদিও শিক্ষার হার বিশ্বজুড়ে বাড়ছে, কর্মসংস্থানে এখনও শিক্ষাগত অমিল রয়েছে। ২০২২ সালে মাত্র ৪৭.৭ শতাংশ কর্মীর শিক্ষাগত যোগ্যতা তাদের কাজের জন্য যথাযথ ছিল। বিগত দশকে কমশিক্ষিত কর্মীর হার ৩৭.৯ শতাংশ থেকে ৩৩.৪ শতাংশে নেমে এলেও, অতিশিক্ষিত কর্মীর হার বেড়ে ১৫.৫ শতাংশ থেকে ১৮.৯ শতাংশ হয়েছে।

বাংলাদেশে তরুন বেকারত্ব জাতীয় বেকারত্ব হারের দ্বিগুণেরও বেশি, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব

প্রতিবেদন জানায়, নতুন প্রযুক্তি বিশেষ করে Generative AI এর প্রভাব বিশ্বজুড়ে কাজের ধরনে পরিবর্তন আনতে পারে। প্রতি চারজনের মধ্যে একজন কর্মীর কাজ এআই দ্বারা রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাঝারি দক্ষতার চাকরিতে এর প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও, উচ্চদক্ষতা সম্পন্ন পেশায় এর ব্যাপকতর স্বচালিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ILO মহাপরিচালক বলেন,

“এই প্রতিবেদন কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্ক বার্তা দেয়, তবে এটি একটি রূপরেখাও দিতে পারে—কীভাবে আমরা মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারি। আমাদের এখনই উদ্যোগ নিতে হবে – সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করে, দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করে, সামাজিক সংলাপ উৎসাহিত করে, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রমবাজার গড়ে তুলে – যেন প্রযুক্তির সুফল সবাই পায়। আমাদের এটা করতে হবে দ্রুত, দৃঢ় প্রত্যয়ে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে।”

আরও পড়ুন