ঢাকা, মে ৬: দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের উল্লম্ফনের প্রভাবে তীব্রভাবে বেড়েছে মূলধন ঘাটতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে যেখানে ২০টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ৫৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা, সেখানে ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকায়। অর্থাৎ, মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মূলধন ঘাটতির শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক, যার ঘাটতির পরিমাণ ৫২ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। এরপরই রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (১৮ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা) এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (১৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা)।
এদিকে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের সম্মিলিত মূলধন ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের অনুপাত (সিআরএআর) কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বর মাসের শেষে ছিল ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে তাদের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সেই পরিমাণ মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়।
ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বৃদ্ধির বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)-এর সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ায় প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে, ফলে অনেক ব্যাংক মুনাফা থেকে প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে থাকা কিছু ব্যাংক আগের সরকারের সুবিধা নিয়ে তথ্য গোপন করেছিল, যা এখন প্রকাশ পাচ্ছে। এই মূলধন ঘাটতির কারণে ব্যাংকের ঋণ বিতরণের সক্ষমতা কমবে এবং আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, মার্চ প্রান্তিকের প্রতিবেদনে মূলধন ঘাটতি আরও বাড়তে পারে, কারণ মার্চ মাস থেকে স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট (এসএমএ) ঋণের প্রভিশনিং হার ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এই ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ আদায় এবং নতুন মূলধন যোগ করতে হবে।