বুধবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ:
খালেদা জিয়াকে ভিভিআইপি ঘোষণার সিদ্ধান্ত ডিভাইস শিল্পের বিনিয়োগ সুরক্ষা দেবে সরকার : ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বাজারে আসছে নতুন ৫০০ টাকার নোট, বৃহস্পতিবার থেকেই পাওয়া যাবে জননিরাপত্তা জোরদারে ডিজিটাল ও কমিউনিটি কৌশল গ্রহণের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশ আমদানি বন্ধ রাখায় বিপাকে ভারত, সীমান্তে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ২ রুপিতে! দেশের অর্থনীতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি, কাজ করার সুযোগ আছে: বাণিজ্য সচিব অবৈধ মাছ ধরা বন্ধে বৈশ্বিক সহযোগিতা জরুরি: মৎস্য উপদেষ্টা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর অনুকূল পরিবেশ তৈরির তাগিদ ইইউর শাহরুখ খানের মার্কশিট ভাইরাল: কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছিলেন বলিউড বাদশা?

মৎস্য শ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান

আইনি অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বিষয়ক জাতীয় সংলাপে গুরুত্বারোপ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: দেশের মৎস্যখাতে কর্মরত প্রায় এক কোটি বিশ লক্ষ মানুষের আইনি অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য শ্রমিক হিসেবে তাদের স্বীকৃতি এবং ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বক্তারা। ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটুং (এফইএস)-এর সহায়তায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)-এর উদ্যোগে রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত এক জাতীয় সংলাপে বক্তারা এই আহ্বান জানান।

বক্তারা উল্লেখ করেন, যেখানে প্রায় এক কোটি বিশ লক্ষ মানুষ মৎস্য সরবরাহ শৃঙ্খলে যুক্ত এবং চৌদ্দ লক্ষ মানুষ সরাসরি এই খাতের ওপর নির্ভরশীল, সেখানে শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা ও জীবনরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল এবং পর্যাপ্ত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি অনুপস্থিত।

আইনের বাইরে অধিকাংশ শ্রমিক

সংলাপে বক্তারা মন্তব্য করেন যে, বাংলাদেশের শ্রম আইনে শুধুমাত্র ফিশিং ট্রলার ও মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের শ্রমিকরা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এর বাইরে দেশের সিংহভাগ মৎস্য শ্রমিক আইনি সুরক্ষার বাইরে রয়ে গেছেন। বিশেষ করে চিংড়ি ও ট্রলার শিল্প ছাড়া অন্য কোনো মজুরি কাঠামো নির্ধারিত নেই।

জাতীয় মৎস্য শ্রমিক অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও বিলস উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য নইমুল আহসান জুয়েল সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। বিলস-এর উপপরিচালক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম গবেষণালব্ধ ফলাফল ও সুপারিশ তুলে ধরেন।

বক্তাদের মূল পর্যবেক্ষণগুলো নিম্নরূপ:

  • শ্রম আইনের আওতার বাইরে: অধিকাংশ মৎস্য শ্রমিকের নিয়োগ, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণসহ কর্মপরিবেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রম আইনের বিধিবিধান মানা হয় না।
  • স্বাস্থ্যঝুঁকি ও ক্ষতিপূরণ: শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মক হলেও চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে।
  • দাদন ও ঋণ: শ্রমিকরা সাধারণত দাদন ও ঋণের জালে আবদ্ধ।
  • নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল: ঝড়, জলোচ্ছ্বাস বা জলদস্যুর আক্রমণ থেকে জীবন রক্ষার জন্য কর্মক্ষেত্রে ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। সাগরে আধুনিক সিগনাল সিস্টেমের অভাবও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়।
  • অনিশ্চিত আয়: প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে পর্যাপ্ত মাছ না পাওয়ায় শ্রমিকরা জীবনধারণের উপযোগী অর্থ আয় করতে পারেন না। মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি সহায়তাও পর্যাপ্ত নয়।

সুপারিশ ও দাবি

বক্তারা মৎস্য শ্রমিকদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ওপর জোর দেন:

  1. সকল মৎস্য শ্রমিককে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা।
  2. শ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি ও পরিচয় নিশ্চিত করা।
  3. শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য যথাযথ সামাজিক নিরাপত্তা স্কিম চালু করা।
  4. শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা।
  5. সকল শ্রমিকের জন্য ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা চালু করা।
  6. ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ নিশ্চিত করা।
  7. পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানো।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিলস নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট (এএলএফ) সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর এ কে এম নাসিম, এবং শ্রম ও মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

সংলাপের লক্ষ্য ছিল এই গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালার সুপারিশগুলি জাতীয় পর্যায়ের অংশীদারদের কাছে উপস্থাপন করা এবং বাংলাদেশে মৎস্যজীবীদের আইনি অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা এবং জীবন ও জীবিকার উন্নয়নের জন্য নীতিগত সংস্কারের পক্ষে সমর্থন তৈরি করা।