ঢাকা, ১৭ আগস্ট: বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং প্রবিধি ও রুলস পরিপালনে ব্যর্থ হলে বিভিন্ন সরকারি ও প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংকের দায়িত্ব পালনে নিযুক্ত কর্মকর্তা এমনকি ব্যাবস্থাপনা পরিচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ছাড় দিচ্ছে না।
ব্যাংকিং খাতের সুশাসনকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর পরিশ্রম করছে। ব্যাংকিং অপারেশন কাজটির জন্য একটি ব্যাংকের সিইও অথবা ব্যাবস্থাপনা পরিচালক প্রধানতম ব্যাক্তি। তিনি ইচ্ছা করলে একটি ব্যাংককে সঠিক সুশাসনের মধ্যে রাখতে পারেন।
কিন্তু বিগত সময়ে অনেক ব্যাংককের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক গণ ব্যাংকের ভেতরের গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও নিয়মের ব্যত্যয় হলেও তারা বিষয়টি গোপন রেখেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে আসতে দেননি।
গভর্নর হিসেবে ডঃ আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংক গুলোর অভ্যান্তরিণ ব্যাবস্থাপনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। যার ফলে সুশাসনের মধ্যে থাকা ব্যাংকগুলো আরো শক্তিশালী হচ্ছে। আর অনিয়মে জড়িত ব্যাংক গুলোর ভেতরে গোপন রাখা বড় বড় অনিয়ম বেরিয়ে আসছে। এসব অনিয়ম হয়েছে ব্যাংককের ব্যাবস্থাপনা পরিচালকদের জ্ঞাতসারেই।
নিয়মানুযায়ী একটি ব্যাংকের সিইও বা ব্যাবস্থাপনা পরিচালক এর জ্ঞাতসারে বাইরে আর্থিক অনিয়ম হতে পারে না। আর অন্য কোন অফিসার এটা করে থাকলে কোন একপর্যায়ে এসে তা চিহ্নিত হয়ে যায়। তখন ব্যাবস্থাপনা পরিচালককে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আলোচনা করে ব্যাবস্থা নেন। ব্যাংককের পরিচালনা পরিষদ কোন অনিয়মের জন্য চাপ দিলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হয়। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাবস্থাপনা পরিচালককে নিয়ম মেনে ব্যাংক পরিচালনায় সহায়তা করেন।
প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের অনিয়মের সংশ্লিষ্ট হওয়ায় ব্যাংককের বোর্ডকে ভেঙে দেন।সম্প্রতি দেশের একডজন ব্যাংককের সিইও ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে পরিবর্তন হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম না মানা ও অনিয়মে সায় দেয়ার কারণে।
এ ধরনের ঘটনায় সর্বশেষ পদত্যাগ করলেন ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে পদত্যাগ করেছেন ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মোহাম্মদ মারুফ। গত বৃহস্পতিবার তিনি তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেন।ব্যাংক সূত্র জানায়, সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকের ভেতরে চাপ বাড়তে থাকে এবং পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সদস্য হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকের ভেতরে টানাপোড়েন তৈরি হয়, যার মধ্যে তিনি পদত্যাগ করেন।২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকা ব্যাংকে এমডি হিসেবে যোগ দেন শেখ মোহাম্মদ মারুফ। এর আগে তিনি সিটি ব্যাংকে অতিরিক্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।তাঁর পদত্যাগ নিয়ে জানতে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও মারুফের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার জানান, “আমাদের সঙ্গে কোনো সমস্যা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু নিয়ম পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তাঁর পদত্যাগপত্র আমরা পেয়েছি। সোমবার পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত হবে।”
চলতি আগস্ট মাসের শুরুতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিন ব্যাংকের এমডি পদত্যাগ করেছেন। সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে আগেই ছুটিতে পাঠানো হয়। পাশাপাশি মেঘনা ও কমার্স ব্যাংকের এমডিরাও হঠাৎ পদত্যাগ করেন।বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, এমডি পদত্যাগ করলে তাৎক্ষণিক কার্যকর হয় না। কারণ ব্যাখ্যা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হয়। পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অতীতে পদত্যাগ করা কোনো এমডিকে আবার দায়িত্বে ফেরানোর নজিরও রয়েছে।