বুধবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ:
খালেদা জিয়াকে ভিভিআইপি ঘোষণার সিদ্ধান্ত ডিভাইস শিল্পের বিনিয়োগ সুরক্ষা দেবে সরকার : ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বাজারে আসছে নতুন ৫০০ টাকার নোট, বৃহস্পতিবার থেকেই পাওয়া যাবে জননিরাপত্তা জোরদারে ডিজিটাল ও কমিউনিটি কৌশল গ্রহণের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশ আমদানি বন্ধ রাখায় বিপাকে ভারত, সীমান্তে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ২ রুপিতে! দেশের অর্থনীতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি, কাজ করার সুযোগ আছে: বাণিজ্য সচিব অবৈধ মাছ ধরা বন্ধে বৈশ্বিক সহযোগিতা জরুরি: মৎস্য উপদেষ্টা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর অনুকূল পরিবেশ তৈরির তাগিদ ইইউর শাহরুখ খানের মার্কশিট ভাইরাল: কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছিলেন বলিউড বাদশা?

বৈষম্য নিরসনে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের আহ্বান: সম্পদ বণ্টনে তীব্র অসাম্য, কার্যকর হচ্ছে না সামাজিক নিরাপত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:

“বৈষম্য দূরীকরণ ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার” শীর্ষক এক গুরুত্বপূর্ণ গোলটেবিল বৈঠক আজ (১৫ নভেম্বর, ২০২৫) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বক্তারা বাংলাদেশের সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে বর্তমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের ভয়াবহ চিত্রের অসামঞ্জস্য তুলে ধরে অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহজাহান খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া

সম্পদ বণ্টনে ভয়াবহ বৈষম্য

মূল প্রবন্ধে দেশের সম্পদ বণ্টনে তীব্র বৈষম্যের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়, যা সংবিধানের ‘সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার’ মূল অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিত্তবান ১০% মানুষ ৫৮.৫% সম্পদের মালিক, যেখানে কম সম্পদশালী ৫০% মানুষের মালিকানা মাত্র ৪.৮%। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, উচ্চবিত্ত ১০% ব্যক্তি মোট জাতীয় আয়ের ৪১% থেকে ৩৮.৫০% এর অধিকারী, পক্ষান্তরে সমাজের নিম্ন আয়ের ১০% লোক মোট জাতীয় সম্পদের মাত্র ১.৩১% ভাগের অংশীদার।

বক্তারা এই বৈষম্যের প্রধান কারণ হিসেবে দুর্নীতির অপ্রতিরোধ্য বিস্তার, ব্যাংক লুটপাট, ঋণ খেলাপী ও অর্থ পাচারকে চিহ্নিত করেন। এছাড়া, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি না পাওয়া, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমবাজার (৮৫% ভাগ) এবং শহর-কেন্দ্রিক বিনিয়োগ বৈষম্য নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ‘শুভঙ্করের ফাঁক’

আলোচকরা জানান, প্রায় ২০টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দারিদ্র্যের হার কমলেও, এটি অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসে তেমন কোনো অবদান রাখতে পারছে না।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ কমে ১১৬,৭৩১ কোটি টাকাতে দাঁড়িয়েছে, যা মোট বাজেটের ১৪.৭৮% ভাগ। বক্তারা উল্লেখ করেন, এই বরাদ্দের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, সঞ্চয় হিসাবের সুদ ও বিভিন্ন সাবসিডি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এগুলো বাদ দিলে প্রকৃত বরাদ্দের হার জিডিপি-র মাত্র ১.৩২% ভাগে নেমে আসে। বক্তারা এখাতের এই ‘শুভঙ্করের ফাঁক’ দূর করার জোর দাবি জানান।

ইসলামী সামাজিক অর্থায়ন ব্যবহারের প্রস্তাব

সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও নীতিগত সংস্কারের ওপর জোর দেন অতিথিরা। তাঁরা উল্লেখ করেন যে, ২০২২ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সমাজ থেকে প্রতি বছর কমপক্ষে ১ লাখ কোটি টাকা যাকাত সংগ্রহ করা সম্ভব। এই বিপুল সম্ভাবনাময় খাতকে কাজে লাগানোর জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় যাকাত, ওয়াকফ, সাদাকা প্রভৃতি ইসলামী সামাজিক অর্থায়নের সকল ইনস্ট্রুমেন্ট সমন্বিতভাবে ব্যবহার করার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

বক্তারা দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, বৈষম্য দূরীকরণ ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কেবল অর্থনৈতিক বিষয় নয়, এটি একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকার। সংবিধানের মূল চেতনার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে নীতি ও কাঠামোগত সংস্কারে হাত দিতে হবে।


গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারীগণ

গোলটেবিল বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: নাজিম উদ্দিন আলম (সাবেক এমপি, বিএনপি), মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী (বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী), মজিবুর রহমান মঞ্জু (এবি পার্টি), ড. আতিক মুজাহিদ (জাতীয় নাগরিক পার্টি – এনসিপি), ফাতেমা তাসনীম জুমা (ডাকসু), কর্নেল (অবঃ) মোহাম্মদ আব্দুল হক (রাওয়া ক্লাব), মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ (চেয়ারম্যান, এসডিএফ), প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ মাসুম (সাবেক উপাচার্য, পবিপ্রবি), ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া (অধ্যাপক, বুয়েট), ড. হাসিনা শেখ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), ড. ইশরাত জাকিয়া সুলতানা (নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়) এবং মাসুমুর রহমান খলিলী (নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত) প্রমুখ।

আরও পড়ুন