ঢাকা, ২৬ জুলাই : আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ধারণকারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমানের দৃষ্টিভঙ্গি ‘স্থিতিশীল’ থেকে কমিয়ে ‘নেতিবাচক’ করেছে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে যে, আগামী এক বছরে দেশের বৈদেশিক তারল্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এবং রিজার্ভের ওপর অব্যাহত চাপের কারণে সার্বভৌম রেটিং হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। শনিবার (২৬ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এসঅ্যান্ডপির মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি গড়ে ৬ থেকে ৬.৪ শতাংশ হারে বাড়তে পারে। তবে বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দেশের বাণিজ্য ও আর্থিক প্রবাহে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা জরুরি।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উদ্বেগজনক পতন
২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৬.০৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক-তৃতীয়াংশের বেশি কমে ২৯.৮৫ বিলিয়ন ডলারে (১৯ জুলাই পর্যন্ত) এসে ঠেকেছে। রিজার্ভের এই তীব্র পতন জ্বালানি আমদানির অর্থ পরিশোধে দেশের জন্য বড় সংকট তৈরি করেছে।
এসঅ্যান্ডপি আরও সতর্ক করে বলেছে, যদি চলতি হিসাবের আয় প্রত্যাশার চেয়ে কম হয়, চলতি হিসাবে ঘাটতি বেড়ে যায়, অথবা রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হয়, তাহলে বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং আরও নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আইএমএফ ঋণ এবং বিশ্লেষকদের পরামর্শ
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি করেছে, যা চলমান অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলায় সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের আস্থা ধরে রাখতে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি সাধন করা অত্যন্ত জরুরি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, এসঅ্যান্ডপির এই ‘নেতিবাচক’ দৃষ্টিভঙ্গি বিদেশি বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের আস্থা দুর্বল করতে পারে। তার মতে, এটি অর্থনীতিতে আরও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে এবং অর্থায়নের খরচ বাড়াবে।
মোয়াজ্জেম আরও বলেন, জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানো এবং ভর্তুকি ব্যবস্থাপনায় অবিলম্বে সংস্কার প্রয়োজন। তার পরামর্শ, দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং সৌরভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
বর্তমানে বাংলাদেশের ঋণমান ‘বিবি মাইনাস’ (BB-) এবং স্বল্পমেয়াদি ‘বি’ (B) অবস্থানে রয়েছে। রেটিং হ্রাস এড়াতে আগামী ১২ মাসের মধ্যে বৈদেশিক খাতের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি করা অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায়, দেশের সার্বভৌম ঋণমান আরও নেমে যাওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে।