ঢাকা: বাংলাদেশের একটি ক্যাশলেস এবং ইন্টারঅপারেবল ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেমের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
সোমবার গুলশানের একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে ইন্টারঅপারেবল পেমেন্ট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন। গভর্নর বলেন, “একটি নগদ-নির্ভর অর্থনীতি আমাদের জন্য ব্যয়বহুল। ব্যাংকিং খাত বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা এবং সরকার রাজস্ব খাতে প্রায় ১.৫ লাখ কোটি টাকা হারায়। তাই, আমাদের ধীরে ধীরে নগদ টাকার ব্যবহার কমাতে হবে এবং ডিজিটাল লেনদেনের দিকে যেতে হবে।”
গভর্নর জানান, একটি ইন্টারঅপারেবল ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম শিগগিরই চালু হবে, যা যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো সময় এবং যেকোনো স্থান থেকে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ প্রদান বা বিনিময় করতে পারবে। তিনি এই প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন। এই সিস্টেমটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে এটি দেশের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একটি একক প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত করবে, যা বাংলাদেশকে একটি ক্যাশলেস অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ড. মনসুর উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশে নগদের চাহিদা প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বেশ কয়েক বছর ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে। এই প্রবণতা ভাঙতে এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে আরও স্বচ্ছ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সমন্বিত ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, ব্যাংক, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এবং ডিজিটাল ব্যাংকসহ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই একক প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবে।
গভর্নর জানান, বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংক চালুর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং ইন্টারঅপারেবল ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম বাস্তবায়নের জন্য গেটস ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “আগেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো সফল হয়নি। এবার আমরা আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি কার্যকর সিস্টেম চালু করতে চাই।”
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী এবং গেটস ফাউন্ডেশন ও আইএফএস বাংলাদেশের প্রধান স্নিগ্ধা আলী।
গভর্নর আরও বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। দেশের প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষ এখন আর্থিক খাতের আওতায় এসেছে, যদিও এখনও ৩৫-৪০ শতাংশ এর বাইরে রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শুধু আওতা বৃদ্ধি যথেষ্ট নয়; গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে আরও গভীরভাবে যুক্ত করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে সকল ব্যবসাকে তাদের প্রতিষ্ঠানে কিউআর কোড প্রদর্শনের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে। গভর্নর মনে করেন, এটি সরাসরি ডিজিটাল পেমেন্টকে উৎসাহিত করবে এবং নগদ লেনদেন কমাবে। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো ফ্রন্ট এবং ব্যাক উভয় ক্ষেত্রেই নগদ টাকার ব্যবহার কমানো। আমরা দোকান, রেস্টুরেন্ট এবং বাজারে ডিজিটাল কিউআর পেমেন্ট জনপ্রিয় করতে চাই।”
জনাব মনসুর আরও উল্লেখ করেন যে, ক্ষুদ্রঋণ খাত বিশাল হলেও এটি ব্যাংকিং খাতের ১০ শতাংশেরও কম। তিনি জোর দেন যে, প্রযুক্তি ছাড়া এই খাত টেকসই হবে না। একইভাবে, এজেন্ট ব্যাংকিং দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও ঋণ বিতরণে এখনও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
সাম্প্রতিক এক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকারদের মধ্যে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নারী হওয়া বাধ্যতামূলক করেছে। গভর্নর ব্যাখ্যা করেন, “গ্রামীণ পরিবারের নারীরা সহজেই গৃহিণী, মেয়ে বা শাশুড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তাই, এজেন্ট হিসেবে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আরও সহায়তা করবে।”
অবশেষে, গভর্নর ঘোষণা করেন যে, ক্রেডিট কার্ড আবেদনের জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যতামূলকrequirement বাতিল করা হয়েছে, যা ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের ব্যবহার বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া, এমএফএস খাতে মাইক্রো-লোনের সীমা ৫০,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এটি ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে।