শুক্রবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ:
শীর্ষস্থানীয় পোশাক ব্র্যান্ড স্ট্যানলি ও বিজিএমইএ এর মধ্যে বৈঠক, পোশাক শিল্পে টেকসই উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা জাতীয় নির্বাচন ও রমজানের কারণে এগিয়ে আনা হলো অমর একুশে বইমেলা ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় দশ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন, রাজনৈতিক কারণ বলছেন শংশ্লিস্টরা কৃষির হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে-বাংলাদেশ : ব্যাকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর<gwmw style="display:none;"></gwmw><gwmw style="display:none;"></gwmw> ঢাকায় শুরু হলো ৪ দিনব্যাপী “সাউথ এশিয়া ট্রেড ফেয়ার” ইসলামী ব্যাংক পেলো ‘মোস্ট আউটস্ট্যান্ডিং ইসলামিক ব্যাংক ২০২৫’ পুরস্কার নগদ টাকার ব্যবহার কমাতে ক্যাশলেস লেনদেনের ওপর জোর, বছরে খরচ সাশ্রয় হবে ১.৬৫ লাখ কোটি টাকা কুঁড়ার তেল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল এনবিআর ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩৬৩ কোটি টাকা আত্মসাত: এস আলম ও নাবিল গ্রুপের মালিকসহ ৪৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে শ্রেণিকৃত ঋণের উল্লম্ফন: চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাত

# ৬১টি ব্যাংকের মোট শ্রেণিবদ্ধ ঋণ ৪.২০ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে যা বিতরণকৃত ঋণের ২৪.১৩%

ঢাকা, ১৫ জুন: বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের স্বাস্থ্য এখন কড়া নজরদারিতে, কারণ নতুন তথ্য অনুযায়ী শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অর্থনীতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং চিত্র তুলে ধরছে।

২৫ মার্চ (প্রথম প্রান্তিক)-এর হিসেব অনুযায়ী, এই “মন্দ ঋণ”-এর গ্রস হার ২৪.১৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি এবং ঋণ বিতরণ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পর্যন্ত সবকিছুকে প্রভাবিত করতে পারে।

সাম্প্রতিক এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ৬১টি তফসিলি ব্যাংকে মোট শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ৪,২০,৩৩৪.৯৪ কোটি টাকায় (প্রায় ৩.৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) দাঁড়িয়েছে। মাত্র তিন মাস আগে, অর্থাৎ ডিসেম্বর (চতুর্থ প্রান্তিক) ২০২৪-এ এর পরিমাণ ছিল ৩,৪৫,৭৬৪.৮৬ কোটি টাকা।

সহজ কথায়, মাত্র এক প্রান্তিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের শতাংশ ৩.৯৩ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে। এক বছর আগের দিকে তাকালে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক মনে হয়, কারণ মার্চ ২০২৪-এ শ্রেণিকৃত ঋণের হার ছিল ১১.১১ শতাংশ, যা বর্তমানে ১৩.০২ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে।

সমস্যা শুধু গ্রস পরিসংখ্যানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যখন আমরা “নিট শ্রেণিকৃত ঋণ” দেখি – অর্থাৎ প্রভিশন এবং স্থগিত সুদ সমন্বয় করার পর – সেই হারও ৩১ মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা ডিসেম্বর ২০২৪-এ ছিল ১০.৫৭ শতাংশ। এর অর্থ হলো, ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের একটি বড় অংশ ব্যাংকগুলোর রিজার্ভ দ্বারা সম্পূর্ণভাবে আবৃত নয়।

খেলাপি ঋণের তীব্র বৃদ্ধি

এই শ্রেণিকৃত ঋণের একটি প্রধান উপাদান হলো “খেলাপি ঋণ” – যে অর্থ ঋণগ্রহীতারা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মার্চ ২০২৫-এর শেষ নাগাদ এই খাতে ৩,৫৭,৬৫৫.২৪ কোটি টাকা জমা হয়েছে, যা মোট ঋণের ২০.৫৩ শতাংশ। ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে এই অঙ্ক ৫২,৫৮১.৮৬ কোটি টাকা বেড়েছে, যা নির্দেশ করে যে আরও বেশি ঋণগ্রহীতা তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণে হিমশিম খাচ্ছেন।

প্রভিশন ঘাটতি বাড়ছে

ব্যাংকগুলো এখন ক্রমবর্ধমান “প্রভিশন ঘাটতি”-এর মুখোমুখি হচ্ছে, যার অর্থ হলো এই মন্দ ঋণের সম্ভাব্য ক্ষতি পূরণের জন্য তারা পর্যাপ্ত অর্থ সরিয়ে রাখেনি। এই ঘাটতি মার্চ ২০২৫-এ ১,৭০,৬৫৫.৩২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা ডিসেম্বর ২০২৪-এর ১,০৬,১৩০.৮২ কোটি টাকা থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ফলস্বরূপ, “প্রভিশন কভারেজ অনুপাত,” যা ব্যাংকগুলোর ঋণ ক্ষতির জন্য প্রস্তুতির পরিমাপ করে, তা ৫০.৭৫ শতাংশ থেকে তীব্রভাবে কমে ৩৭.৯৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি নির্দেশ করে যে ব্যাংকগুলো সম্ভাব্য ভবিষ্যতের ধাক্কা থেকে কম সুরক্ষিত হচ্ছে।

কোথায় ঋণের আঘাত সবচেয়ে বেশি?

প্রতিবেদনে আরও তুলে ধরা হয়েছে যে এই সমস্যাযুক্ত ঋণগুলো কোথায় কেন্দ্রীভূত হয়েছে:

  • রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি বোঝা বহন করে চলেছে, তাদের ঋণের ৪৫.৭৯ শতাংশ শ্রেণিকৃত হিসাবে চিহ্নিত। গত প্রান্তিকে এটি ছিল ৪২.৮৩ শতাংশ।
  • বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখেছে, তাদের শ্রেণিকৃত ঋণের হার ১৫.৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০.১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
  • এমনকি বিদেশি ব্যাংক এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোও সামান্য বৃদ্ধি অনুভব করেছে, যদিও তাদের সামগ্রিক শতাংশ যথাক্রমে ৪.৮৩ শতাংশ এবং ১৪.৪৭ শতাংশে কম রয়েছে।

কেন এই বৃদ্ধি? চিহ্নিত প্রধান কারণসমূহ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে এই উদ্বেগজনক প্রবণতার পেছনে বেশ কয়েকটি মূল কারণ তুলে ধরা হয়েছে:

  • মেয়াদী ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধি: বিধিমালা পরিবর্তন, বিশেষ করে বিআরপিডি সার্কুলার নং-০৯/২০২৪, যা মেয়াদী ঋণের মেয়াদকাল পুনরায় নির্ধারণ করেছে, এটি একটি ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে।
  • কঠোর শ্রেণিকরণ: বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ কিছু গ্রাহকের বৃহৎ অংকের ঋণকে “বিরূপ মানে” শ্রেণিকৃত করেছে, যা এই বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
  • চলতি ঋণের নবায়ন না হওয়া: অনেক “চলতি ঋণ” নবায়ন হচ্ছে না, ফলে সেগুলোকে শ্রেণিকৃত বিভাগে ঠেলে দিচ্ছে।
  • পুনঃতফসিলকৃত কিস্তি বকেয়া: যে সকল ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছিল, তারা যথাসময়ে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন।
  • মন্দ ঋণে সুদ আরোপ: এমনকি যে সকল ঋণ ইতিমধ্যেই বিরূপ মানে শ্রেণিকৃত, সেগুলোতেও সুদ আরোপ করা হচ্ছে, যা মোট শ্রেণিকৃত অঙ্ককে আরও স্ফীত করছে।

এই পরিসংখ্যানগুলো বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের মধ্যে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোকে তুলে ধরে, যা আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় অব্যাহত সতর্কতা এবং শক্তিশালী নীতিগত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।

আরও পড়ুন