নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারো ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২.১২ বিলিয়ন ডলারে। এর আগের দিন বুধবারও রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে অবস্থান করছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
রিজার্ভের বিস্তারিত হিসাব
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত হিসাব পদ্ধতি, অর্থাৎ বিপিএম-৬ (BPM-6) পদ্ধতিতে হিসাব করলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭.৪৫ বিলিয়ন ডলারে।
বুধবারের অবস্থান: গতকাল বুধবার (১০ ডিসেম্বর) গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩১.৮৯ বিলিয়ন ডলার, যা বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে ২৭.২২ বিলিয়ন ডলারে ছিল।
পূর্বের অবস্থান: গত ৬ নভেম্বর রিজার্ভ ৩২.৭১ বিলিয়ন ডলারের সর্বোচ্চ অঙ্কে পৌঁছায়, যা বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে ছিল ২৮ বিলিয়ন ডলার।
আকু (ACU) দায় পরিশোধ এবং রিজার্ভের ওঠানামা
গত ৯ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু)-এর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের জন্য ১৬১ কোটি ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আকুর এই দায় পরিশোধের পর দেশের গ্রস রিজার্ভ ৩১.১৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে এবং এরপর এটি ৩০ থেকে ৩১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছিল।
আকু বিল বৃদ্ধি: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই মাসে (মে-জুন মেয়াদের) ১.৯৬ বিলিয়ন ডলার আকু বিল পরিশোধের পর ২০২৩ সালের পুরো সময় জুড়ে এই দ্বিমাসিক বিল ১.৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে ছিল। তবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে আকু বিল আবার বাড়তে শুরু করে। চলতি বছরের মে-জুন মেয়াদে বিলের পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আকুর পরিচিতি: আকু হলো ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা—মোট ৯টি দেশের আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তির সংস্থা। ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (ইউএনইএসক্যাপ) এটি প্রতিষ্ঠা করে।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ
দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের প্রবাহকে সহায়তা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সক্রিয়ভাবে ব্যাংকগুলো থেকে অতিরিক্ত ডলার কিনছে।
ডলার ক্রয়: আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৬টি ব্যাংক থেকে ১৪৯ মিলিয়ন (প্রায় ১৫ কোটি) মার্কিন ডলার কিনেছে। এই ডলার কেনা হয়েছে মাল্টিপল প্রাইস নিলাম (Multiple Price Auction) পদ্ধতির মাধ্যমে, যেখানে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২২.২৫ টাকা থেকে ১২২.২৯ টাকা পর্যন্ত। কাট-অফ রেট নির্ধারিত হয়েছে ১২২.২৯ টাকা।
মোট ক্রয়: চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ পর্যন্ত নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক মোট ২.৬৬ বিলিয়ন ডলার কিনেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ১৩ জুলাই থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে।