ঢাকা, ৩০ জুন: পোশাক রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) একটি পৃথক বস্ত্র ও পোশাক মন্ত্রণালয় গঠন, ঋণ শ্রেণিকরণ এবং বন্ড নিরীক্ষা নীতি সহজীকরণের দাবি জানিয়েছে। পোশাক খাতের শীর্ষ নেতারা গুরুত্বপূর্ণ এই শিল্পের চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং এর ধারাবাহিক সম্প্রসারণের পথ সুগম করতে সরকারের সক্রিয় সমর্থন চাইছেন।
সোমবার (৩০ জুন) বিডা কার্যালয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের সাথে বৈঠকে বিজিএমইএ এই আবেদন জানায়। 3বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বৈঠকে পোশাক খাতের নেতৃত্ব দেন।
বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি খান শিল্পের ওপর বর্তমানে প্রভাব বিস্তারকারী উল্লেখযোগ্য বাধাগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পাল্টা শুল্ক, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল, উচ্চ ব্যাংক সুদ, এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘন ঘন মূল্য বৃদ্ধি পোশাক শিল্পের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।” খান এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় এবং শিল্পের সম্প্রসারণ নিশ্চিত করতে বিডার সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

বিজিএমইএ প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি (অর্থ) মিজানুর রহমান, সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার ভিদিয়া অমৃত খান এবং পরিচালক সামিহা আজিম। বিডা ও বেজার পক্ষ থেকে নির্বাহী সদস্য (ইনভেস্টমেন্ট ইকোসিস্টেম) মো. মোখলেসুর রহমান (অতিরিক্ত সচিব) এবং বেজার নির্বাহী সদস্য সালেহ আহমেদ (অতিরিক্ত সচিব) উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএ’র মূল প্রস্তাবনা:
- চট্টগ্রামে সমন্বিত পোশাক শিল্পাঞ্চল: চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাক কারখানাগুলোকে সহায়তার জন্য, বিজিএমইএ সভাপতি শহর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কারখানাগুলোকে একটি নির্দিষ্ট জোনে একত্রিত করে একটি সমন্বিত পোশাক শিল্প এলাকা গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। তিনি বিশেষভাবে বিডা ও বেজাকে চট্টগ্রামের বিজিএমইএ’র অনুকূলে প্রতীকী মূল্যে এক খণ্ড জমি বরাদ্দের অনুরোধ জানান। নির্বাহী চেয়ারম্যান বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন এবং জানান যে, অনতিবিলম্বে বিজিএমইএ ও বিডা প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে, যা এক সপ্তাহের মধ্যে একটি কর্ম-পরিকল্পনা পেশ করবে।
- নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পুনর্ব্যবহার শিল্পে বিনিয়োগ: বিজিএমইএ তাদের টেকসই ও সার্কুলারিটি বিষয়ক উদ্যোগগুলো তুলে ধরে, জোর দিয়ে বলে যে পোশাক শিল্পে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার অপরিহার্য। তারা কারখানাগুলোতে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে জ্বালানি রূপান্তরকে উৎসাহিত করার জন্য একটি পথনকশা প্রণয়ন এবং প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানায়। প্রতিনিধিদল আরও উল্লেখ করে যে পোশাক শিল্পে বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এই খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে যথাযথ নীতি প্রণয়ন, খাতটিকে করমুক্ত করা এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের তদারকির আওতায় আনা জরুরি। তারা এসব বিষয়ে বিডার সহযোগিতা কামনা করেন।
- ঋণ শ্রেণিকরণ ও বন্ড নিরীক্ষা প্রক্রিয়া সহজীকরণ: বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালা নিয়েও আলোচনা হয়। বিজিএমইএ নেতারা বর্তমান ৩ মাসের গ্রেস পিরিয়ডকে ৬ মাসে উন্নীত করার অনুরোধ জানান, কারণ অনেক সময় আর্থিক সংকটের কারণে উদ্যোক্তারা নির্দিষ্ট সময়ে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে ঋণ শ্রেণিকরণের শিকার হন। তারা বন্ড অডিট প্রক্রিয়াকে সময়ক্ষেপণকারী, হয়রানিমূলক এবং রপ্তানি বাণিজ্যের দৈনন্দিন কার্যক্রমে গুরুতর বাধার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। এই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও দ্রুততা নিশ্চিত করতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বন্ড নিরীক্ষার জন্য ২০টি প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করার বিষয়েও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানানো হয়।
- বস্ত্র ও পোশাক মন্ত্রণালয় গঠন: বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানকে পোশাক শিল্পকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে না রেখে স্বতন্ত্রভাবে বস্ত্র ও পোশাক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানান।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অসামান্য অবদানের প্রশংসা করেন। তিনি বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেন যে, পোশাক শিল্পের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব জোরদার করার পাশাপাশি বিডা সকল ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।