ঢাকা – একটি টেকসই অর্থনীতি এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য শিল্পগুলোকে কর নীতি মেনে চলতে হবে, প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং রাজস্ব আদায়ে পেশাদারিত্ব আনতে হবে। বিশেষজ্ঞরা সোমবার (২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) একটি সেমিনারে এসব মতামত দিয়েছেন।
এমএবিএস অ্যান্ড জে পার্টনার্স আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অর্থ অধ্যাদেশ ২০২৫-এর প্রভাব’ শীর্ষক এই সেমিনারে বক্তারা বলেন, পরোক্ষ করের পরিবর্তে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে, রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং কর অব্যাহতি যুক্তিসঙ্গত করতেও উদ্যোগ নিতে হবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)-এর সভাপতি কামরান টি. রহমান। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৮ শতাংশ, যা বিশ্বে অন্যতম সর্বনিম্ন। তিনি করের জাল সম্প্রসারণের মাধ্যমে এই অনুপাত বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন, মুদ্রা অবমূল্যায়নের কারণে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ২৫-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে, যা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নেক্সিয়ার অনুমোদিত সিএ ফার্ম এমএবিএস অ্যান্ড জে পার্টনার্সের সিনিয়র পার্টনার মো. শাহাদৎ হোসেন এফসিএ। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫.৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও আমদানি হ্রাসের ফল। তবে, ২০২৪ সালে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার ইঙ্গিত দেয়।
শাহাদৎ হোসেন আরও বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং খাত রেকর্ড মূলধন ঘাটতি, উচ্চ মাত্রার অনাদায়ী ঋণ (এনপিএল) এবং দুর্বল প্রশাসনের মতো গুরুতর সংকটের সম্মুখীন। তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নীতিগত বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানো, শুল্ক ও ভ্যাট প্রক্রিয়া সহজ করা এবং বিনিয়োগে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তিনি অর্থ অধ্যাদেশ ২০২৫-এর কিছু ইতিবাচক দিকও তুলে ধরেন:
- করমুক্ত আয়ের সীমা: করমুক্ত আয়ের সীমা ৩.৫০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩.৭৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে।
- উৎসে কর হ্রাস: বিদেশী ক্রেতাদের এজেন্টদের কমিশন/পারিশ্রমিক থেকে উৎসে কর ১০% থেকে কমিয়ে ৭.৫০% করা হয়েছে।
- রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প: ১০০% রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের সাব-কন্ট্রাক্টরদের উপর ১% হারে উইথহোল্ড ট্যাক্স (WHT) প্রযোজ্য হবে, যা রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
- পুঁজিবাজার: স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের কাছ থেকে উৎসে কর ০.০৫% থেকে কমিয়ে ০.০৩% করা হয়েছে, যা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
সেমিনারে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং এর উন্নয়নে কার্যকর নীতিমালার ওপর বিস্তারিত আলোচনা হয়।