ঢাকা, ২২ জুন :সরকারি চাকরিজীবী ও অবসরভোগীদের জন্য এসেছে এক দারুণ খবর। বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে সরকারি কর্মচারীরা কমপক্ষে ১৫০০ টাকা এবং অবসরভোগীরা ৭৫০ টাকা অতিরিক্ত পাবেন। এই সিদ্ধান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের পূর্বের প্রজ্ঞাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী, যা শিগগিরই পৃথক আদেশের মাধ্যমে কার্যকর হবে। রোববার (২২ জুন) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে।
রবিবার বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর আগে এদিন সকালে সচিবালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদারও এই বর্ধিত সুবিধার কথা ঘোষণা করেন, যা সরকারি মহলে ব্যাপক স্বস্তি এনেছে।
অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বিস্তারিত জানিয়ে বলেন, পূর্বে চাকরিরত ব্যক্তিদের জন্য ন্যূনতম ১০০০ টাকা এবং পেনশনভোগীদের জন্য ৫০০ টাকা বিশেষ সুবিধার কথা বলা হয়েছিল। এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে চাকরিরতদের জন্য ন্যূনতম **১৫০০ টাকা** এবং পেনশনভোগীদের জন্য ন্যূনতম ৭৫০ টাকা করা হয়েছে। এটি সরকারের জনবান্ধব নীতির একটি প্রতিফলন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পেশের আগে সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা নিয়ে আলোচনা চলছিল। তবে সরকার শেষ পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতার পরিবর্তে ‘বিশেষ সুবিধা’ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেছিলেন যে, ২০১৫ সালের পর নতুন কোনো বেতনকাঠামো না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।”
সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুসারে, ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হবে। বেতন গ্রেড অনুযায়ী, গ্রেড-১ ও তদূর্ধ্ব থেকে গ্রেড-৯ পর্যন্ত ১০ শতাংশ এবং গ্রেড-১০ থেকে গ্রেড-২০ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ হারে এই ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রদান করা হবে। জাতীয় বেতনকাঠামোর আওতাভুক্ত সরকারি (বেসামরিক), স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং পুলিশ বাহিনীর কর্মরত ও পেনশনভোগী (পুনঃস্থাপনকৃত) কর্মচারীরা এই সুবিধার আওতায় আসবেন।
অর্থ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) থাকা কর্মচারীরা পিআরএল-এ যাওয়ার আগপর্যন্ত তাদের সর্বশেষ মূল বেতনের ভিত্তিতে বর্ণিত গ্রেডভিত্তিক হারে ‘বিশেষ সুবিধা’ পাবেন। যারা পেনশন পুনঃস্থাপন করেছেন, তারা সরকারের বিদ্যমান পেনশন অংশের ওপর বর্ণিত গ্রেডভিত্তিক হারে এই বিশেষ সুবিধা ভোগ করবেন। তবে, যেসব কর্মচারী তাদের মোট পেনশনের ১০০ শতাংশ অর্থাৎ সম্পূর্ণ অংশ এককালীন আনুতোষিক হিসেবে উত্তোলন করেছেন এবং এখনো পেনশন পুনঃস্থাপনের জন্য উপযুক্ত হননি, তাদের ক্ষেত্রে এই সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। একইভাবে, বিনা বেতনে ছুটিতে থাকা কর্মচারীরাও এই সুবিধার আওতায় আসবেন না।
এদিকে, অর্থ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানানো হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা খাতে উপদেষ্টা পরিষদ আজ ৮১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা থেকে অতিরিক্ত **১০ হাজার কোটি টাকা** বরাদ্দ দিয়েছে। এর ফলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য এ খাতে মোট বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়িয়েছে **৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা**। এই বরাদ্দে অবসর ভাতা ও সঞ্চয়পত্রের সুদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৯০ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা, যা নতুন এই সিদ্ধান্তের পর আরও বৃদ্ধি পেল। এই বর্ধিত বরাদ্দ দেশের দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
—