সরকার দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী সব ধরণের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ এবং ১৮ বছরের কমবয়সী শিশু-কিশোরদের নিকট তামাক বিক্রি নিষিদ্ধ সম্পর্কে জানানোর জন্য ছয় সপ্তাহব্যাপী মাসমিডিয়া ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) এর উদ্যোগে চলতি মাসের ১৬ এপ্রিল থেকে আগামী ৩১ মে, বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পর্যন্ত এ প্রচারণা চলবে। ‘তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ’ শীর্ষক এ প্রচারণা বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং স্টপ টোব্যাকো বাংলাদেশ -এর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে [ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স, লিংকইন, ইউটিউব] বিভিন্ন কন্টটেন্ট প্রচার করা হবে।
এ প্রচারণায় তামাকের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা এবং তার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। সিগারেটের প্রচারণা কিভাবে তরুণদের প্রভাবিত করতে পারে তা বিভিন্ন দৃশ্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম দৃশ্যে দেখা যায়, একটি দোকানে সিগারেটের প্যাকেটগুলো খুবই আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো থাকে। এখানে একটি কিশোর তার মায়ের সঙ্গে দোকানে আসে, কিন্তু তার চোখে সিগারেটের প্যাকেটের দিকে আকর্ষণ ফুটে ওঠে, যা তার মনে সিগারেটের প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে পারে।
পরের দৃশ্যে দেখা যায়, সিগারেট কোম্পানির প্রতিনিধি তরুণদের ধূমপানে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে। পরে, একটি চায়ের দোকানে আইন লঙ্ঘণ করে সিগারেটের প্যাকেট সুস্পষ্টভাবে প্রদর্শন করে। এক পর্যায়ে, একজন কিশোর রাস্তার কাছে একটি দোকান থেকে সিগারেট কিনে তা ধরায়, যা প্রমাণ করে যে শিশু-কিশোর-তরুণেরা সিগারেটের প্রচারণায় প্রলুব্ধ হচ্ছে এবং তারা সিগারেট ক্রয় করতে পারছে।
সবশেষে, সকল দৃশ্য একত্রিত হয়ে সিগারেটের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা তরুণদের মধ্যে প্রভাব তুলে ধরা হয়। এর মাধ্যমে সিগারেটের প্রচারণা নিষিদ্ধ ও অনুর্ধ্ব ১৮-বছর বা কমবয়সী শিশুদের নিকট তামাক বিক্রি নিষিদ্ধ বিষয়ক বার্তা তুলে ধরা হয়। আইন লঙ্ঘণ করে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হলে অনুর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের নিকট তামাক বিক্রি করলে জরিমানা ৫০০০ টাকা জরিমানার বিধান উল্লেখ করা হয়। পুণঃপুণঃ আইন লঙ্ঘণে সাজার পরিমাণ পর্যায়ক্রমে দ্বিগুণ হবে জানিয়ে সকলকে আইন মেনে চলার আহবান জানানো হয়।
ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর সিনিয়র কনসালটেন্ট মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ অনুযায়ী প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া, বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ড বা অন্য কোনভাবে এবং প্রেক্ষাগৃহ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়/ওয়েবপেজে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ। তামাকজাত দ্রব্যের কোন নমুনা, বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে, জনসাধারণকে প্রদান এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বা উহার ব্যবহার উৎসাহিত করিবার উদ্দেশ্যে, কোন দান, পুরস্কার, বৃত্তি প্রদান বা কোন অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার বহন করা নিষিদ্ধ। এছাড়া সিনেমা, নাটক বা প্রামান্যচিত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট, মঞ্চ অনুষ্ঠান বা অন্য কোন গণমাধ্যমে প্রচার, প্রদর্শন বা বর্ণনা করা যাবে না। তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক, প্যাকেট বা কৌটার অনুরূপ বা সাদৃশ্য অন্য কোন দ্রব্য বা পণ্যের মোড়ক, প্যাকেট বা কৌটার উৎপাদন, বিক্রয় বা বিতরণ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে যে কোন উপায়ে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ।
ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর টেকনিক্যাল এডভাইজার আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী শিশুদের নিকট (অনধিক আঠারো বৎসর বয়স) তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় এবং তাদের দ্বারা তামাকজাত দ্রব্য বিপণন/বিতরন নিষিদ্ধ। আইনের এসব ধারা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। বিশেষ করে, তামাক কোম্পানিগুলো যত্রতত্র তামাকের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা করছে। তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাক পণ্য সাজিয়ে প্রচার করা হচ্ছে – যা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই ছয় সপ্তাহব্যাপী এ প্রচারণা সময়উপযোগী। তামাকের প্রাণঘাতী নেশা থেকে কিশোর-তরুণদের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কঠোর বাস্তবায়নের পাশাপাশি বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা দূর করে আইনটি শক্তিশালী করা প্রয়োজন।