গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী চেতনার আলোকে অংশীজনদের পরামর্শক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যৌন নিপীড়ন ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একাধিক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে একইসঙ্গে যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।
পুনর্গঠিত যৌন নিপীড়নবিরোধী কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. উপমা কবির। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন:
- এডভোকেট সালমা আলী, সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।
- অধ্যাপক ড. মির্জা তাসলিমা সুলতানা, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
- অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
- অধ্যাপক ডালিয়া পারভীন, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
- অধ্যাপক ড. উম্মে বুশরা ফাতেমা সুলতানা, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এর পাশাপাশি যৌন নিপীড়ন, যৌন হয়রানি, বুলিং, র্যাগিং ইত্যাদি প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নীতিমালা ও ব্যবস্থা পর্যালোচনার জন্য মাননীয় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশাকে সভাপতি করে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্যান্য সদস্য হলেন:
- গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন।
- ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন।
- উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আয়েশা বানু।
- আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইকরামুল হক।
পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুসরণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে: (ডিনস কমিটির সভায় অনুমোদন সাপেক্ষে এই সুপারিশগুলো কার্যকর করার ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।)
১. যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বিরোধী কেন্দ্রীয় তদন্ত কমিটির পাশাপাশি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদাকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যান্য সদস্য হলেন: বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মাহবুবা সুলতানা, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের স্কুল অব ল-এর ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুজ্জামান ভুইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মো. ইলিয়াস আল-মামুন এবং কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভুইয়া।
২. প্রতিটি অনুষদ, হল, হোস্টেল এবং ইনস্টিটিউটে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হবে, যেখানে অন্তত দুইজন নারী সদস্য থাকতে হবে। এর পাশাপাশি বিভাগ পর্যায়ে এ ধরনের কমিটি থাকার ব্যাপারেও সুপারিশ করা হচ্ছে।
৩. প্রশাসন মনে করে, অভিযোগকারীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বিলম্ব এবং একজন নারী অভিযোগকারীকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়া যৌক্তিক নয়। এ কারণে ‘তথ্যানুসন্ধান কমিটি’ গঠন করার প্রয়োজন নেই।
৪. বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ বিষয়ক অনুষদ, হল, হোস্টেল, ইনস্টিটিউটভিত্তিক কমিটি যৌন হয়রানি সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পেলে তা নিজেরা তদন্ত করতে পারবে কিংবা তদন্তের পূর্বে বিষয়টি যৌন হয়রানি বিষয়ক কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠাতে পারে।
৫. যৌন হয়রানি, বুলিং ও র্যাগিং সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণের জন্য প্রতিটি একাডেমিক ভবন, হল, হোস্টেল ও ইনস্টিটিউটে অভিযোগ বক্স স্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ডিন, প্রভোস্ট, ওয়ার্ডেন ও ইনস্টিটিউট পরিচালকগণ এই বক্স তদারকি করবেন এবং অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কমিটিতে নিয়মিতভাবে পাঠাবেন।
৬. নতুন শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানিবিরোধী একটি সেশন বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
৭. প্রতিটি বিভাগ/ইনস্টিটিউটে বছরে অন্তত একবার যৌন হয়রানি, বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা আয়োজনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় প্রশাসন সকল অনুষদের ডিন, সকল ইনস্টিটিউট পরিচালক, সকল হলের প্রভোস্ট, এবং হোস্টেল ওয়ার্ডেনদের যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন, বুলিং, র্যাগিং ও স্টকিং ইত্যাদির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা নীতি’ অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছে।
প্রশাসন সকলের অংশগ্রহণে একটি নিরাপদ, সম্মানজনক ও বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যৌন নিপীড়ন, যৌন হয়রানি, বুলিং, র্যাগিং ও স্টকিং ইত্যাদি প্রতিরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।