বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫
সর্বশেষ:
চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃক নতুন ট্রেডিং সময়সূচী প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছে, ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন উদ্যোক্তা তৈরির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় ’এসএমই’ উন্নয়ন নীতি ২০২৫’ তৈরি করছে একক ব্যক্তি ৪৫ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন বিআইএ নির্বাহী কমিটির নির্বাচন, ২০টি পদের জন্য ৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জব্দকৃত অ্যাকাউন্ট থেকে লুট হওয়া অর্থ উদ্ধারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএফআই ইউ হত্যা ও গুমের অভিযোগে হাসিনার বিচার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে একটি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম মুশফিকুর রহমান এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন হিসেবে যোগদান করেছেন জুনের মধ্যে গতি ফিরে পাবে শেয়ারবাজার: ডিএসই চেয়ারম্যান জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির উদ্বেগের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিগত হার বৃদ্ধির কথা ভাবছে

গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইআইটি  অবিলম্বে শিক্ষাসংস্কার কমিশন গঠনের দাবি

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on print

ঢাকা, অক্টোবর ৭: অবিলম্বে শিক্ষাসংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি)। সেই সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের রূপরেখাও উপস্থাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সোমবার (৭ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় বিআইআইটি।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং শিক্ষা উদ্যোক্তা ড. এম আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে বহু শিক্ষানীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা ছিল শাসকগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনাকে সাধারণ জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াস। এসব নীতিতে দেশের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, ও দর্শনকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে পাঠক্রমে খেয়ালখুশি মতো পরিবর্তন, রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় এবং অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় ধ্বংসের পথে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট তরুণ নেতৃত্বের গণজাগরণে স্বৈরাচারী শক্তির পতন ঘটার পর নতুন সম্ভাবনা ও পরিবর্তনের দ্বার উন্মোচিত হয়। এই নতুন অধ্যায়কে ‘বাংলাদেশ ২.০’ নামে অভিহিত করা হচ্ছে- যেখানে শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ও পুনর্গঠন অন্যতম অগ্রাধিকার পাচ্ছে। জাতি গঠনের প্রধান নিয়ামক হিসেবে এ প্রজন্মের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী ও কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা।

ড. এম আবদুল আজিজ বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ মানবিকতা, যুক্তিবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা এবং দেশপ্রেমের আদর্শ তুলে ধরা হলেও তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সমন্বয়হীন একটি সেকেলে শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালের জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলে নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও, তার বাস্তবায়নও সফল হয়নি। ২০২১ সালে চালু করা জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা নীতিনির্ধারণে অদূরদর্শিতার ও জাতিসত্তার সাথে সাংঘর্ষিক উপাদান থাকায় এটিও ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্যে বিগত সরকারের গৃহীত সংশোধিত কৌশলগত কর্মপরিকল্পনার (২০১৮-২০৩০) ক্রিটিক্যাল রিভিউ প্রয়োজন।

এসময় তিনি দীর্ঘদিনের গবেষণা এবং পর্যালোচনার ভিত্তিতে, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও থিংকট্যাঙ্ক— বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থ্যটের (বিআইআইটি) পক্ষ থেকে শিক্ষা সংস্কারের বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। তাদের সুপারিশগুলো শিক্ষানীতি, পাঠক্রম, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত।

শিক্ষানীতি

১. জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে শিক্ষাদর্শন, ভিশন, মিশন এবং উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। দেশীয় সত্ত্বা ও মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়ে, কল্যাণমুখী রাষ্ট্র বিনির্মাণে, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন, দক্ষ এবং ভালো মানুষ গড়ে তোলাই প্রাধান্য পাওয়া উচিত জাতীয় শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে।

২. শিক্ষায় যে কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শহর-গ্রামীণ ভেদাভেদ দূর করে ভারসাম্যপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা বিশেষভাবে বিবেচনায় নিয়ে, তাদের জন্য শিক্ষা বাজেটে অগ্রাধিকার নীতি চালু করতে হবে।

৩. বিগত বছরগুলোতে উচ্চশিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বিধায় উচ্চশিক্ষার মান ধরে রাখার জন্য সংখ্যা না বাড়িয়ে গুণগত মানের দিকে নজর দেওয়া উচিত। এ লক্ষ্যে ঢাকা ও জেলার পরিবর্তে বিভাগীয় শহরে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন/অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে।

৪. দেশের শ্রমবাজার এবং বিশ্ব শ্রমবাজারে জনশক্তি রপ্তানির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ডিপ্লোমা চালু করা উচিত, যাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা যায়। এছাড়া কারিগরি ধারায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সম্প্রসারণ, গবেষণা কার্যক্রম এবং শিক্ষা মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ লক্ষ্যে জেলাভিত্তিক প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কারিগরি শিক্ষার বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা উচিত।

৫. দেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পূর্ণ গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা। এছাড়া সব বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬০ শতাংশ শিক্ষকভিত্তিক ও ৪০ শতাংশ গবেষণাভিত্তিক এ উন্নীত করা।

৬. বাংলাদেশ প্রধানত কৃষিনির্ভর দেশ। তাই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার পাশাপাশি উন্নত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যাপক ভিত্তিতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে।

৭. ১ম ও ৪র্থ আন্তর্জাতিক মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে গৃহীত (১৯৭৭-১৯৮৩) মক্কা ডিক্লারেশনে বাংলাদেশ একটি স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে গৃহীত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে, যা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই, পরবর্তী শিক্ষাসংস্কার কমিশন অবশ্যই সেই ডিক্লারেশনে গৃহীত সুপারিশমালার বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।

পাঠক্রম

১. সব ধারার শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু সাধারণ বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যা ইংরেজি মাধ্যম, বাংলা মাধ্যম, আলীয়া মাদরাসা বা কওমি মাদরসা—সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। এসব বিষয়ের মধ্যে থাকবে: বাংলাদেশ পরিচিতি, ইতিহাস ও সভ্যতা, সামাজিক বিজ্ঞান এবং ধর্ম শিক্ষা। পাশাপাশি, ভাষাগত দক্ষতা ও কম্পিউটার দক্ষতা অর্জনকেও বাধ্যতামূলক করতে হবে।

২. জাতীয় শিক্ষাক্রমে অবশ্যই বাংলা, ইংরেজি এবং আরবি—তিনটি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আরবি পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ ভাষা, একই সঙ্গে দেশের একটি বিশাল জনশক্তি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত।

৩. সবি স্তরের পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচিতে জীবনমুখী দক্ষতা এবং বিষয়ভিত্তিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের যথাযথ সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।

৪. জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় সব স্তরে ‘ফান্ডামেন্টালস অব রিলিজিয়ন’ (মুসলিমদের জন্য ফান্ডামেন্টালস অব ইসলাম) বিষয় বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৫. এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে ‘প্রাসঙ্গিক ধর্মীয় কোর্স’ বাধ্যতামূলক করতে হবে। যেমন, অর্থনীতিতে ইসলামি অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ইসলামি রাষ্ট্রচিন্তা, আইনে ইসলামিক লিগ্যাল থিওরি ইত্যাদি।

৬. আমাদের দেশের শিল্প এবং অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর সঙ্গে মিল রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভাগ চালু ও শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করা, যাতে আমাদের দেশকে ভিন্ন দেশ থেকে লোক নিয়োগ করতে না হয় (টিআইবি’র তথ্যমতে বাংলাদেশে ৫ লাখ ভারতীয় কর্মরত আছে)। যে বিষয়ে আমাদের দক্ষ জনশক্তি দরকার, সেই পরিমাণ জনশক্তি তৈরিতে ব্যর্থ হচ্ছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। এক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষায় করপোরেট ইন্টারেস্টে সংযুক্ত অপ্রয়োজনীয় পাঠ্য বিষয়গুলো বাদ দিয়ে সোশ্যাল ইন্টারেস্টে প্রয়োজনীয় নতুন বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যেসব বিষয়ের বাস্তব প্রয়োগ নেই, সেগুলোকে ধীরে ধীরে অন্যান্য প্রাষঙ্গিক বিষয়ের সঙ্গে একীভূত করে বিলুপ্ত করতে হবে।

৭. কওমি মাদরাসায় ভালো আলেম গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ও কওমি শিক্ষাব্যবস্থার স্বকীয়তা বজায় রেখে সিলেবাস যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে কওমি শিক্ষাবোর্ড ও অন্য বোর্ডের মতো ক্ষমতায়িত করে শিক্ষকদের শিখন দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় শিক্ষকদের সরকারি এমপিওভুক্তি করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন