নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থটের (বিআইআইটি) প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি জেনারেল, বিশিষ্ট চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ ও গবেষক মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম আর নেই। গত ৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঢাকার উত্তরাস্থ নিজ বাসভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন।
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিআইআইটি-এর মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবদুল আজিজ। তিনি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেছেন এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
ইসলামিক অর্থনীতিতে পথিকৃত
ড. এম আবদুল আজিজ মরহুম মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম সম্পর্কে বলেন, তিনি ছিলেন দেশের ইসলামিক অর্থনীতি, ব্যাংকিং, উন্নয়ন নীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি গবেষণার একজন পথিকৃৎ। ইসলামিক অর্থনীতি ও চিন্তাচর্চায় তাঁর অবদান ছিল অনন্য। দেশে ইসলামিক অর্থনীতি গবেষণার বিস্তারে তিনি অন্যতম অগ্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন।
ড. আজিজ আরও বলেন, মুসলিম সমাজকে এগিয়ে নিতে তাঁর দূরদৃষ্টি ও নিষ্ঠা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক স্থায়ী অনুপ্রেরণার অসাধারণ উৎস হয়ে থাকবে। বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে তাঁর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। বিআইআইটি-এর অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা, পাঠ্যক্রম উন্নয়ন এবং ‘ইসলামায়ন অব নলেজ’ আন্দোলনে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবন ও জাতীয় অবদান
মোহাম্মদ জহুরুল ইসলামের শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন ছিল অসাধারণ সাফল্যে ভরপুর।
- শিক্ষাজীবন: ১৯৭০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
- কর্মজীবন: চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে পেশাজীবন শুরু করে পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন শীর্ষ সরকারি প্রতিষ্ঠানে ফাইনান্স ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন এবং আইসিএবি-এর অধীনে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেছেন।
- প্রতিষ্ঠাতা ভূমিকা: তিনি বাংলাদেশ ইসলামিক ইকোনমিকস রিসার্চ ব্যুরো (প্রতিষ্ঠা: ১৯৭৬) এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ইসলামিক ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (প্রতিষ্ঠা: ১৯৮৩)-এর প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
- গুরুত্বপূর্ণ পদে: তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক, ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই সেন্টার (ডেসা), উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজউকের ফিন্যান্স ডিরেক্টরসহ বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
গবেষণা ও আন্তর্জাতিক পরিচিতি
তিনি অর্থনীতি, ব্যাংকিং, ফাইন্যান্স, সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক ১৩টিরও বেশি বই এবং অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন। বিশ্বখ্যাত এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইসলামিক ইকোনোমিক্স-এ প্রকাশিত তাঁর ‘ইনফ্রাস্ট্রাক্চার ডেভেলপমেন্ট অব মুসলিম কান্ট্রিজ’ শীর্ষক গবেষণা নিবন্ধটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন, যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, নেপাল, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে গবেষণা, সেমিনার ও সংলাপে অংশ নিয়েছেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটরস প্রোগ্রাম-এ অংশগ্রহণ করেন।
সামাজিক সংগঠক হিসেবে তিনি এশিয়ান মুসলিম অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (আমান)-এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি কোনো দল বা গোষ্ঠীর ছিলেন না, ছিলেন পুরো জাতির ও উম্মাহর সম্পদ।
জনকল্যাণে নিবেদিত
কানাডায় স্থায়ী হওয়ার পরও তিনি কমিউনিটি সেবায় যুক্ত ছিলেন এবং এর স্বীকৃতিস্বরূপ অন্টারিও ভলান্টিয়ার সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড ২০১৩ লাভ করেন।
তিনি আশফাক-আজিজ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং পরকালের কল্যাণে নিজের স্থাবর-অস্থাবর বহু সম্পত্তি দান করে গেছেন। তিনি সিরাজগঞ্জে নিজ এলাকায় জোবায়দা মসজিদ, আশফাক আজিজ রিসার্চ সেন্টার, আশফাক আজিজ ইসলামিক একাডেমী, আশফাক আজিজ এতিমখানা ও শিক্ষা কেন্দ্র, মফিজ উদ্দীন সরকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।