বুধবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ:
খালেদা জিয়াকে ভিভিআইপি ঘোষণার সিদ্ধান্ত ডিভাইস শিল্পের বিনিয়োগ সুরক্ষা দেবে সরকার : ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বাজারে আসছে নতুন ৫০০ টাকার নোট, বৃহস্পতিবার থেকেই পাওয়া যাবে জননিরাপত্তা জোরদারে ডিজিটাল ও কমিউনিটি কৌশল গ্রহণের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশ আমদানি বন্ধ রাখায় বিপাকে ভারত, সীমান্তে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ২ রুপিতে! দেশের অর্থনীতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি, কাজ করার সুযোগ আছে: বাণিজ্য সচিব অবৈধ মাছ ধরা বন্ধে বৈশ্বিক সহযোগিতা জরুরি: মৎস্য উপদেষ্টা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর অনুকূল পরিবেশ তৈরির তাগিদ ইইউর শাহরুখ খানের মার্কশিট ভাইরাল: কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছিলেন বলিউড বাদশা?

ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি নজিরবিহীন: ভেনেজুয়েলায় হামলার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন ট্রাম্প!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ওয়াশিংটন:

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন বলে হোয়াইট হাউসের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক উপস্থিতি নজিরবিহীনভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিশাল রণতরী এবং প্রায় ১৫ হাজার সেনা মোতায়েন।

সিএনএন-এর চারটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়, চলতি সপ্তাহেই উচ্চপর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তারা ট্রাম্পকে ভেনেজুয়েলায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের বিভিন্ন দিক নিয়ে ব্রিফ করেছেন। এই বিস্তৃত অভিযানের সুবিধা-অসুবিধা ও ঝুঁকিগুলো বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

ব্যাপক সামরিক সমারোহ: ‘অপারেশন সাউদার্ন স্পিয়ার’

পেন্টাগনের ঘোষিত ‘অপারেশন সাউদার্ন স্পিয়ার’ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রস্তুতি অভূতপূর্ব মাত্রা পেয়েছে। সেখানে ১২টির বেশি যুদ্ধজাহাজ এবং প্রায় ১৫ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

এই সামরিক বহরের কেন্দ্রে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড, যা এই সপ্তাহের শুরুতেই লাতিন ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে পৌঁছেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সবচেয়ে মারাত্মক যুদ্ধ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত। বহরে ক্রুজার, ডেস্ট্রয়ার, বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কমান্ড জাহাজ, উভচর হামলা চালাতে সক্ষম জাহাজ এবং একটি সাবমেরিনও রয়েছে। এছাড়াও, নজরদারি জোরদার করতে সর্বাধুনিক ১০টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পুয়ের্তো রিকোতে পাঠানো হয়েছে।

চিন্তন প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষক এরিক ফার্নসওয়ার্থ এই প্রস্তুতিকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে বলেছেন, “এর (সেনাসমাবেশ) মাত্রা ও গতি উভয় নিয়েই আমি বিস্মিত। চলতি শতাব্দীতে এটিই এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় সামরিক প্রস্তুতি। এমন ঘটনার নজির খুঁজতে গেলে ১৯৮৯ সালে পানামায় যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়।”

ট্রাম্পের মনোভাব ও বিকল্প লক্ষ্যবস্তু

গত শুক্রবার এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি অনেকটা মনস্থির করে ফেলেছি… আমি একরকম সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি।”

বুধবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইনসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্রিফিংয়ের পর বৃহস্পতিবার ‘সিচুয়েশন রুমে’ জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে ট্রাম্পের বড় বৈঠক হয়। বৈঠকগুলোতে সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে সামরিক বা সরকারি স্থাপনায় বিমান হামলা, মাদক পাচারের রুটগুলোয় আঘাত হানা, অথবা মাদুরোকে উৎখাতে সরাসরি সামরিক প্রচেষ্টার বিকল্পগুলো ট্রাম্পকে দেখানো হয়েছে।

লাভ-ক্ষতি ও মাদুরোর হুঁশিয়ারি

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারলে ট্রাম্প যেমন বড় ধরনের সাফল্যের কৃতিত্ব দাবি করতে পারবেন (নির্বাচিত নেতৃত্বকে ক্ষমতায় আনা এবং জ্বালানি তেল নিয়ে সম্ভাব্য চুক্তি), তেমনি সামরিক হস্তক্ষেপের গুরুতর চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

এদিকে, মার্কিন হুমকির জবাবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো ব্যাপক হারে অস্ত্র, সরঞ্জাম ও সেনা মোতায়েন শুরু করেছেন। শুক্রবার কারাকাসে দেওয়া ভাষণে মাদুরো হুঁশিয়ারি দেন যে, মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ লাতিন আমেরিকায় ‘আরেকটি গাজা’, নতুন আফগানিস্তান বা আবার ভিয়েতনামের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

তিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “যারা দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে বোমা হামলা, হত্যা ও যুদ্ধ শুরুর নির্দেশ দেয়, তাদের উন্মত্ত হাত থামাও। যুদ্ধকে ‘না’ বলো।”

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানাচ্ছে, তিনি ব্যর্থ হতে পারে বা মার্কিন সেনাদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক মনোভাব দেখাচ্ছেন। তবে আইনপ্রণেতাদের কাছে কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলার ভেতরে স্থল অভিযানের আইনি ভিত্তি না থাকলেও প্রয়োজনে তারা এমন আইন তৈরি করে নিতে পারেন।