ঢাকা: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতকে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে পরপর চারটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছে বিনিয়োগ সমন্বয় কমিটি। এসব বৈঠকে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় উদ্যোক্তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
কমিটির সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সহ সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা এই বৈঠকগুলোতে উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এই তথ্য জানানো হয় এবং ইতোমধ্যে গৃহীত ও বাস্তবায়নাধীন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরা হয়।
ইতোমধ্যে গৃহীত ও বাস্তবায়নাধীন প্রধান উদ্যোগসমূহ
এসএমই উদ্যোক্তাদের দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থায়ন, শুল্ক ও লাইসেন্স সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
১. বৈদেশিক বাণিজ্য সহজীকরণ ও অর্থায়ন
- বৈদেশিক মুদ্রা জমা রাখার বাধ্যবাধকতা অপসারণ: বৈদেশিক অর্ডার থেকে প্রাপ্ত অর্থের ১০ শতাংশ বাধ্যতামূলকভাবে ব্যাংকে জমা রাখার নিয়ম নীতিমালা থেকে অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
- পৃথক বৈদেশিক মুদ্রা কোটা: ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে বছরে ন্যূনতম ৩,০০০ মার্কিন ডলারের পৃথক বৈদেশিক মুদ্রা কোটা বরাদ্দের বিষয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো হয়েছে।
- অগ্রিম পরিশোধের সীমা বৃদ্ধি: ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়া আগাম অর্থ প্রদানের সীমা ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার মার্কিন ডলার এবং বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ (ইআরকিউ) হিসাব থেকে পরিশোধের সীমা ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে।
- এইচএস কোড জটিলতা নিরসন: এনবিআর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এখন থেকে আট অঙ্কের এইচএস কোডের মধ্যে প্রথম চার অঙ্ক মিলে গেলেই শুল্ক কর্তৃপক্ষ মূল্যায়ন সম্পন্ন করবে, যা কাস্টমস প্রক্রিয়াকে দ্রুত করবে।
২. নতুন নীতি ও আর্থিক পণ্য
বাংলাদেশ ব্যাংকে ৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বৈঠকে আরও চারটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়:
- নতুন আর্থিক পণ্য নকশা: এসএমই ফাউন্ডেশন ও এসএমই বিভাগ যৌথভাবে কর্মশালা আয়োজন করে এসএমই খাতের জন্য চলতি মূলধন বা উদ্যোক্তাবান্ধব আর্থিক পণ্য নকশার উদ্যোগ নেবে।
- লাইসেন্সবিহীন ঋণ: বাণিজ্য লাইসেন্স ছাড়া পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া সম্ভব কিনা, তা যাচাইয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হবে।
- সুদের হার পুনর্বিবেচনা: ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচিকে আকর্ষণীয় করতে গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার সমন্বয় করা যায় কিনা, সে বিষয়ে মতামত দেবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
- নীতিমালার কার্যকারিতা মূল্যায়ন: এসএমই মাস্টার সার্কুলারের পারফরম্যান্স মূল্যায়নের মাধ্যমে এর কার্যকারিতা যাচাই করা হবে।
৩. ডিজিটাল পেমেন্ট ও অনলাইন বিক্রয়
- ডিজিটাল ওয়ালেটের সুবিধা: ডিজিটাল মানিব্যাগের মাধ্যমে অর্থপ্রাপ্তিতে উদ্যোক্তারা যেন আইটি খাতের মতো সুবিধা পান, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
- অনলাইন বিক্রির অর্থ: অনলাইন বিক্রির অর্থ দ্রুত উদ্যোক্তার ব্যাংক হিসাবে জমা নিশ্চিত করতে এসএসএল কমার্স ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
- অনলাইন রপ্তানি: অনলাইন বাজারের মাধ্যমে রপ্তানিতে বিদ্যমান নীতিমালায় বি–টু–বি (B2B) ও বি–টু–সি (B2C) মডেল অন্তর্ভুক্ত করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশেষ দূতের মন্তব্য
এ প্রসঙ্গে বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “সংস্কারের একটি মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থনীতিতে গতিশীলতা বাড়ানো। সম্মিলিতভাবে এসএমই খাত আমাদের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখে। আমাদের অবশ্যই এসব উদ্যোক্তাদের গতিশীলতা বাড়ানোতে সাহায্য করতে হবে এবং তাদের ব্যবসা প্রতিটি পর্যায়ে সহজ করতে হবে—অর্থায়ন থেকে অর্থপ্রদান ও সরবরাহ ব্যবস্থা পর্যন্ত। সরকারকে এর সহায়ক হতে হবে, বাধা নয়।“