বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকা:
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের, বিশেষ করে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ঋণ খেলাপি হওয়া বা বকেয়া কিস্তি থাকার কারণে অযোগ্য হওয়া ঠেকাতে তৎপর হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক (BB)। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমস্ত তফসিলি ব্যাংককে ঋণ পরিশোধের তথ্য অবিলম্বে হালনাগাদ করার নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশের ফলে সম্ভাব্য প্রার্থীরা যোগ্যতা ধরে রাখতে দ্রুত তাদের খেলাপি ঋণ এবং বকেয়া কিস্তি পরিশোধের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন।
বিভিন্ন ব্যাংক, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (NBFI) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, ঋণ নিয়মিত করার জন্য আবেদন জমা পড়ার হার হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে।
সিআইবি-তে নির্ভুল তথ্য দেওয়ার নির্দেশ
এর পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (CIB) সারা দেশের সমস্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আর্থিক যোগ্যতা নিশ্চিত করতে ঋণ-সম্পর্কিত তথ্য দ্রুত আপডেট করার জন্য কঠোর নির্দেশ জারি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা শনিবার বলেছেন, কোনো ঋণগ্রহীতা আদালতের মাধ্যমে স্টে অর্ডার পেলেও, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো পরিবর্তন না করে ঋণের সঠিক অবস্থা সিআইবি-তে রিপোর্ট করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জোর দিয়েছে যে, তথ্য গোপন করার বা ‘স্বেচ্ছামূলক’ ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।
গত ২৯ অক্টোবর সব ব্যাংক ও এনবিএফআই-এর সিআইবি প্রতিনিধিদের সাথে একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা জানানো হয় যে, নির্বাচনে কোনো ঋণ খেলাপি যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে নির্বাচনের আগেই ঋণের তথ্য হালনাগাদের কাজ শেষ করতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিআইবি কর্মকর্তা বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সরকার আসন্ন নির্বাচনে কোনো ঋণ খেলাপিকে প্রার্থী হতে দেবে না।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রাহকদের ঋণের অবস্থা হালনাগাদ করছে। তিনি আরও যোগ করেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংককে হালনাগাদ ক্রেডিট তথ্য সরবরাহ করা ব্যাংকগুলোর একটি রুটিন দায়িত্ব।
কোনো বিশেষ সুবিধা নয়
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচনের আগে দীর্ঘদিনের খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে চাওয়া ঋণগ্রহীতাদের বিষয়ে বিদ্যমান নিয়মাবলী কঠোরভাবে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। ঋণ পুনঃতফসিল করার ক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রম, বিশেষ সুবিধা বা নিয়ম লঙ্ঘন অনুমোদন করা হবে না।
যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখনও সিআইবি-তে তাদের খেলাপি ঋণের তথ্য জমা দেয়নি, তাদের অবিলম্বে তা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাস শেষের বকেয়া স্থিতির ভিত্তিতে সমস্ত নতুন এবং চলমান ঋণের সম্পূর্ণ অবস্থা বিস্তারিতভাবে রিপোর্ট করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ব্যাংকগুলোকে যে তথ্য হালনাগাদ করতে হবে:
ব্যাংকগুলোকে বিশেষভাবে নিম্নলিখিত তথ্যগুলো আপডেট করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে:
- চলমান ও নিষ্পত্তি হওয়া ঋণের অ্যাকাউন্ট, সঠিক ব্যালেন্স এবং শ্রেণিকরণের অবস্থা।
- মেয়াদপূর্তির তারিখ এবং বকেয়া ব্যালেন্স।
- খেলাপি কিস্তির সংখ্যা ও মূল্য এবং কিস্তি পরিশোধ বা পুনরুদ্ধারের বিবরণ।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঋণের তথ্য দিনরাত ২৪ ঘণ্টা যাচাই নিশ্চিত করতে, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিটি ব্যাংক শাখাকে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে। তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
নির্বাচনী আইন স্পষ্টভাবে বলেছে যে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাত দিন আগে পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর ব্যাংক ঋণের অবস্থা ‘নিয়মিত’ হিসাবে শ্রেণিকৃত না হলে তিনি অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কঠোর উদ্যোগ আসন্ন নির্বাচনের আগে ঋণ খেলাপিদের মনোনয়ন পেতে বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।