অর্থনৈতিক মন্দা, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা, রাজস্ব ঘাটতি ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রস্তাবিত ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন। এ বাজেট বিষয়ে ইন্টান্যাশনাল বিসনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সংগঠনটির পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়..
মোট বাজেটের আকার: ৭.৯৭ লক্ষ কোটি টাকা
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা: ৫.৬৪ লক্ষ কোটি টাকা
বাজেট ঘাটতি: জিডিপির ৪.৬%
মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ:
এডিপি বরাদ্দ: ২.৩ লক্ষ কোটি টাকা (পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ১৩.২% কম)
মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্য: ৬.৫%
জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য: ৬.৭৫%
করমুক্ত আয়সীমা: ৩.৭৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তহবিল: ১,০০০ কোটি টাকা প্রস্তাব
অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধকরণ: আগের মতোই চালু, তবে বেশি হারে কর ধার্য
শুল্ক সমন্বয়: কাঁচামাল ও প্রয়োজনীয় ওষুধে শুল্ক হ্রাস
ভূমি নিবন্ধন ফি: হ্রাসকৃত
সবুজ পরিবহন প্রণোদনা: ইলেকট্রিক বাইকের জন্য সুবিধা
আইবিএফবি প্রশংসনীয় দিকসমূহকে স্বাগত জানায়:
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) প্রস্তাবিত বাজেটের কয়েকটি ইতিবাচক দিককে প্রশংসা করে:
১. করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধি:নিম্নআয়ভুক্ত মানুষের জন্য এটি একটি স্বস্তির খবর।
২. জুলাইযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ সুবিধা:করমুক্ত সীমা ৫.২৫ লক্ষ টাকায় উন্নীত করা একটি সম্মানজনক পদক্ষেপ।
৩. নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তহবিল:১,০০০ কোটি টাকার তহবিল নারীর অর্থনৈতিক অন্তর্ভূক্তিকে উৎসাহিত করবে।
৪. শুল্কের যৌক্তিকীকরণ:কাঁচামাল ও ওষুধে শুল্ক হ্রাস উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়ের জন্য লাভজনক।
৫. গ্রীন পরিবহনে প্রণোদনা:পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ হিসেবে ই- বাইকের উৎসাহ যুগোপযোগী।
৬. ই-কমার্স খাতকে আনুষ্ঠানিকীকরণ:কর ও নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা এই খাতের দীর্ঘমেয়াদি বিকাশে সহায়ক হবে।
৭. পিপিপি উদ্যোগে বরাদ্দ: ৫,০৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলে অবকাঠামো খাতে গতি আসতে পারে, তবে বাস্তবায়নে দক্ষতা জরুরি।
আইবিএফবির প্রতিক্রিয়া, অভিমত
ইতিবাচক দিক সত্ত্বেও, বাজেটটিকে আইবিএফবি কাঙ্ক্ষিত সংস্কার এবং বেসরকারি খাতের পুনরুজ্জীবনের সুযোগ হিসেবে পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়নি বলে মনে করে।
১. কাঠামোগত সংস্কারের অভাব:কর প্রশাসন, ঋণ টেকসইকরন এবং সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনায় কোনো মৌলিক সংস্কার দেখা যায়নি।
২. বেসরকারি খাত উপেক্ষিত:ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, রপ্তানিকারক এবং স্টার্টআপদের জন্য নেই কার্যকর প্রণোদনা।
৩. ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের অনুপস্থিতি:খেলাপি ঋণ, সুদের হার সমস্যা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা নেই।
৪. এডিপির দুর্বল পরিকল্পনা:বরাদ্দ কমানো হলেও দক্ষতা ও অগ্রাধিকারবিহীন প্রকল্পের কারণে কার্যকর বাস্তবায়ন অনিশ্চিত।
৫. অপ্রতুল সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম:১.১৬ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দের বড় অংশই পেনশন ও ভর্তুকিতে, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায় না।
৬. অবাস্তব রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা:৫.৬৪ লক্ষ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা কার্যকর কর সংস্কার ছাড়া অর্জনযোগ্য নয়।
৭. মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পরিকল্পনার অভাব:লক্ষ্য নির্ধারণ আছে, কিন্তু বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নেই।
৮. ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিতকরণ:টার্নওভার ট্যাক্স ০.৬% থেকে ১% এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কর ৫% থেকে ১৫% – এই বৃদ্ধিগুলি নবীন উদ্যোক্তাদের বাধাগ্রস্ত করবে।
৯. অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধকরণ অব্যাহত:এটি সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায় এবং আর্থিক শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত করে।
১০. যুবউন্নয়ন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগের ঘাটতি:গবেষণা, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও ডিজিটাল রূপান্তরে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ নেই।
আইবিএফবি-এর সুপারিশসমূহ
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও সমন্বিত উন্নয়নের লক্ষ্যে বাজেটকে আরও কার্যকর করতে সরকারকে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হচ্ছে:
১. কর ব্যবস্থার সংস্কার: রাজস্ব আদায়ে ডিজিটাল পদ্ধতি এবং ন্যায্য করনীতি নিশ্চিত করা।
২. বেসরকারি খাতকে উদ্দীপনা প্রদান:ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ ঋণ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা।
৩. ব্যাংকিং খাত সংস্কার:খেলাপি ঋণ কমানো, সুশাসন নিশ্চিত করা ও কম সুদে ঋণ সহজলভ্য করা।
৪. এডিপি বাস্তবায়ন:উচ্চ-প্রভাবসম্পন্ন প্রকল্পে অগ্রাধিকার ও বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ জোরদার করা।
৫. সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করা:স্বচ্ছতা বাড়ানো, কর্মসূচির পুনরাবৃত্তি রোধ এবং প্রকৃত দরিদ্রদের কাছে সহায়তা পৌঁছানো।
৬. বাস্তবসম্মত মুদ্রাস্ফীতি কৌশল গ্রহণ:সরবরাহ চেইনের জটিলতা দূর করে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা।
৭. উদ্ভাবন ও যুব কর্মসংস্থান:গবেষণা ও উন্নয়ন, কারিগরি শিক্ষা ও ডিজিটাল উদ্যোগে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
৮. অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধকরণ বন্ধ:সীমিত সময়ের এককালীন সুযোগের মাধ্যমে কঠোরভাবে আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
৯. সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা:সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, ভর্তুকির যৌক্তিকীকরণ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
১০.যাকাত আহরন ও বিতরন ব্যবস্থা আধুনিয়ানে কার্যকরী ব্যাবস্থা গ্রহনের বিষয়টি ব্যাপক গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে সুদৃঢ় করা যেতে পারে।