ঢাকা, ৬ মে : স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের টেকসই উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। কৃষি, শিক্ষা, উদ্যোক্তা তৈরি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এই ছয়টি প্রধান খাতে প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভাব ফেলেছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, “আমাদের সামাজিক উদ্যোগগুলো মূল কার্যক্রমের অতিরিক্ত নয়, বরং এটা আমাদের পরিচয়ের অংশ। আমরা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের জন্য কাজ করছি এবং উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন, শিক্ষার্থীদের বিকাশ, পরিবেশ রক্ষা, কৃষিকে শক্তিশালী করা, উদ্ভাবনে সহায়তা এবং দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর মতো বিষয়গুলোতে বিনিয়োগ করছি।”
কৃষি খাতে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড দেশের ২৩টি জেলায় ১১টি কৃষি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, মাছ ও মৌচাষ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এবং কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ। এছাড়াও, ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭টি গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়েছে, যা কৃষিতে নতুন উদ্ভাবন ও উন্নয়নে সাহায্য করবে।
স্বাস্থ্যখাতে, সারাদেশে চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্পের মাধ্যমে ১১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে সেবা দেওয়া হয়েছে এবং ভাসমান হাসপাতালের মাধ্যমে দুর্গম গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ চিকিৎসা পেয়েছে। পাশাপাশি, ১১৮ জন নার্সকে প্রশিক্ষণ এবং ৪টি কমিউনিটি হাসপাতালে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে।
শিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে, ইউসেপ-এর সাথে যৌথভাবে ফিউচারমেকার্স কর্মসূচির আওতায় প্রায় সাত হাজার তরুণ-তরুণীকে দক্ষতা উন্নয়ন ও চাকরি সংক্রান্ত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে একটি কনফারেন্স সেন্টার ও শিক্ষক লাউঞ্জ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং জাগো ফাউন্ডেশনের সাথে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষাসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি তরুণ-তরুণীকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ সুরক্ষায়, খুলনা মুক্তি সেবা সংস্থা ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সাথে ফুল চাষের উন্নয়ন এবং প্লাস্টিক দূষণ কমাতে কাজ করছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। এছাড়া, ৫০ হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভ বন তৈরির জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্প শুরু হয়েছে, যা জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখের বেশি মানুষকে জরুরি সহায়তা এবং উত্তরাঞ্চলে দশ হাজারের বেশি মানুষকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। চরাঞ্চলে বন্যাঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বন্যাকালীন সুরক্ষার জন্য আটটি প্লিন্থ তৈরি করা হয়েছে।
এসব প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়নে দেখা গেছে, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে হাওর কৃষকদের আয় ১৫.৫৭% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ফসলের উৎপাদন ৩২.১১% বেড়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ফলে কৃষিকাজের সময় এবং খরচ উভয়ই কমেছে। চরাঞ্চলে কৃষি সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে ৯২% পরিবার উন্নত খাদ্যাভ্যাসের কথা জানিয়েছে এবং নিরাপদ বাসস্থানের কারণে মানসিক চাপ কমেছে। মধু উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে মধু চাষীদের আয় বেড়েছে এবং প্রায় ৭০% চাষী ফলন বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের প্রধান বিটোপি দাস চৌধুরী বলেন, “মাঠপর্যায়ে আমাদের সহযোগী সংস্থাগুলোর অবদান ছাড়া এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হতো না। তাদের দক্ষতা ও স্থানীয় সম্পৃক্ততাই আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতি নিশ্চিত করেছে।”
এসব উদ্যোগ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ এবং এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের পাশে থেকে দেশের টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখতে চায়।
উল্লেখ্য, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড একটি শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক ব্যাংক এবং ৫৩টি উন্নয়নশীল বাজারে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজের উন্নতি করা।