ঢাকা, ৮ই এপ্রিল – মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে দ্বিপাক্ষিকভাবে বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবিলার চেষ্টা করছেন, তা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। এমন ঘটনা আগে কখনো দেখা যায়নি। এর মাধ্যমে ট্রাম্প বাজার অর্থনীতিকে ছুঁড়ে ফেলেছেন।পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) এক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান এই মন্তব্য করেন।যারা বিশ্বায়ন শুরু করেছিল, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, তারাই আজ বিশ্বায়ন ব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশগুলোকে টিকে থাকতে হবে। এতদিন বিশ্ব ব্যবস্থা একভাবে চলেছে; এখন তা ভিন্ন পথে চলবে, এমন মন্তব্য করেন রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, এখন আর ‘সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট’ নয়, অর্থাৎ সেরা মানুষেরা টিকে থাকবে, এই নীতি প্রাধান্য পাবে না। বরং যারা ভালোভাবে আলোচনা ও দর কষাকষি করতে পারবে, তারাই টিকে থাকবে।রাজধানীর পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) কার্যালয়ে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেহমান সোবহান এসব কথা বলেন। ‘শুল্ক কারসাজির যুগে বাণিজ্যনীতি, বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।রেহমান সোবহান মন্তব্য করেন, পৃথিবী যেন নিয়মভিত্তিক বাণিজ্য ব্যবস্থা থেকে আবার সেই স্তালিন আমলের কমান্ড অর্থনীতিতে ফিরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অর্থনীতি ও বাণিজ্যকে রীতিমতো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে অর্থনৈতিক নিয়ম অনুসরণ না করে অন্য বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।রেহমান সোবহান মনে করেন, ট্রাম্প যেভাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চাইছেন, তাতে সফল হওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশও যেভাবে উচ্চ শুল্ক থেকে বাঁচতে রপ্তানি বাড়ানোর কথা বলছে, তাও বাজার অর্থনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা বা সুতা আমদানি করা হয় কোনো শুল্ক ছাড়াই। সেই সুতা দিয়ে তৈরি পোশাক বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। কিন্তু আমরা কি চাইলেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে সুতা রপ্তানি বাড়াতে পারব? আমরা বিভিন্ন ধরণ, দাম ও বাজারের জন্য পোশাক তৈরি করি। তাই সব পোশাক মার্কিন সুতা দিয়ে তৈরি করা সম্ভব নয়। কমান্ড অর্থনীতির মতো হুকুম দিয়ে এই আমদানি বাড়ানো যায় না।পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার বলেন, নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ইতিহাসে এটা একটি খারাপ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে। এটা চূড়ান্ত আঘাত। কীভাবে আমরা এখান থেকে বেরিয়ে আসব, তা কারো জানা নেই। যুক্তরাষ্ট্রও বাণিজ্য ঘাটতিতে রয়েছে, তারা যা উৎপাদন করে, তার চেয়ে বেশি খরচ করে। বাংলাদেশও চলতি হিসাবের ঘাটতিতে আছে, অর্থাৎ আমরা সঞ্চয়ের চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করছি। তবে এটা খারাপ কিছু নয়।জায়েদী সাত্তার আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বাংলাদেশের ওপর করের বোঝা অনেক বেশি; এখানে নিয়মনীতির স্বচ্ছতা নেই, দুর্নীতি আছে এবং মেধাস্বত্ব অধিকারও সুরক্ষিত নয়। সরকার কর কমাতে পারবে, কিন্তু অন্যান্য সমস্যাগুলোর সমাধান কীভাবে হবে?২রা এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বিশ্বের সব দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।