সোমবার ১৪ এপ্রিল, ২০২৫
সর্বশেষ:

বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আড়াই মাসে ২৪০টিরও বেশি মৃত মা কাছিম ভেসে আসায়, পরিবেশবিদরা উদ্বিগ্ন

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on print

ঢাকা,৪ মার্চ:- বাংলাদেশের কক্সবাজার সৈকতে একের পর এক মৃত মা কাছিম ভেসে আসার ঘটনা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। গত আড়াই মাসে ২৪০টিরও বেশি মৃত মা কাছিম সৈকতে ভেসে এসেছে।

সৈকতের ৫০টিরও বেশি স্থানে এই মৃত কাছিমগুলো পাওয়া গেছে, যার সবগুলোই অলিভ রিডলে প্রজাতির। মৃত কাছিমগুলোর ৯০ শতাংশের শরীরেই আঘাতের চিহ্ন এবং পেটে ডিম ছিল।

পরিবেশকর্মীদের ধারণা, কাছিমগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরার জালে আটকে মারা গেছে, কারণ অনেক কাছিমের শরীরেই ছেঁড়া জাল জড়ানো ছিল। গভীর সাগর থেকে ডিম পাড়তে আসা মা কাছিমগুলো কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলে পেতে রাখা জালে আটকে মারা যাচ্ছে।

সম্প্রতি নাজিরারটেক সৈকতে একটি মৃত কাছিম ভেসে আসে, যার একটি পা ছিল না এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। স্থানীয় জেলেরা পরে সেটি বালুচরে পুঁতে ফেলেন। স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন সৈকতে এক-দুটি করে মৃত কাছিম ভেসে আসছে।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, গত আড়াই মাসে মহেশখালীর সোনাদিয়া থেকে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার সৈকতে ২৪০টির মতো মৃত কাছিম ভেসে এসেছে। আগে শুধু কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে মৃত কাছিম দেখা গেলেও, এখন পর্যটকদের ভিড় থাকা সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টেও মৃত কাছিম ভেসে আসছে। প্রতি কিলোমিটারে তিনটি করে মৃত কাছিম পাওয়া যাচ্ছে, যার ৯০ শতাংশের শরীরেই আঘাতের চিহ্ন এবং পেটে ডিম রয়েছে।

গত জানুয়ারিতে ১৩৫টি এবং ফেব্রুয়ারিতে ৮৭টি মৃত কাছিম সৈকতে ভেসে আসে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গবেষক মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ চৌধুরী জানান, কাছিমের শরীরে ছেঁড়া জাল ও রশি জড়ানো ছিল এবং অবকাঠামো নির্মাণের কারণে সেন্ট মার্টিনে কাছিমের ডিম পাড়তে আসার সংখ্যা কমে গেছে।

সমুদ্র উপকূলে ৬৫ হাজারের বেশি ট্রলার মাছ ধরে, যার বেশির ভাগেই ফাঁসজাল ব্যবহার করা হয়। গভীর সাগরে ট্রল নেট দিয়ে মাছ ধরার কারণেও কাছিম মারা যাচ্ছে। এছাড়া জাহাজ বা ট্রলারের ধাক্কা, অন্যান্য জলজ প্রাণীর আক্রমণ এবং দূষণের কারণেও কাছিমের মৃত্যু হতে পারে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিন জানান, সাগরে নিষিদ্ধ জালে আটকে বহু কাছিমের মৃত্যু হচ্ছে। নেকম-এর আবদুল কাইয়ুম জানান, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৩০টির বেশি মৃত কাছিম সৈকতে ভেসে এসেছে। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিমুল ভূঁইয়া জানান, দুই দিনে ৬৮টি মৃত কাছিম ভেসে এসেছিল।

নেকমের শফিকুর রহমান জানান, পেটে ডিম থাকায় মা কাছিমগুলো ক্লান্ত থাকে এবং সামান্য আঘাতেই মারা যায়। দিন দিন ডিম পাড়ার জায়গা কমে যাওয়ায় কাছিমের মৃত্যু বাড়ছে। দীপক শর্মা জানান, কুকুর ও গুইসাপ মৃত কাছিম ও ডিম খেয়ে ফেলছে। তিনি জেলেদের সচেতন করার ওপর জোর দেন।

কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির দেলোয়ার হোসেন জানান, জালে আটকে পড়লে কাছিম ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ চৌধুরী জানান, হক্সবিল ও গ্রিন টার্টল প্রজাতির কাছিম ডিম পাড়তে আসা বন্ধ করে দিয়েছে এবং অলিভ রিডলের সংখ্যাও কমছে।

মেরিন বায়োলজিস্ট আবদুল কাইয়ুম জানান, নির্জন সৈকতে কাছিম ডিম পাড়তে আসে, কিন্তু পর্যটনের বিকাশ, অবকাঠামো নির্মাণ, আলোকসজ্জা এবং সমুদ্রে জাল ফেলে দেওয়ার কারণে ডিম পাড়ার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

গত বছর দুটি অলিভ রিডলে কাছিমের বুকে চিপট্যাগ লাগিয়ে সাগরে ছাড়া হয়েছিল, কিন্তু তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এর আগে তিনটি কাছিমের পিঠে স্যাটেলাইট যন্ত্র লাগিয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন