সোমবার ১৪ এপ্রিল, ২০২৫
সর্বশেষ:

বড়সুযোগেরহাতছানি: সংস্কারেলাখলাখনতুনকাজেরআশাদেখাচ্ছেবিশ্বব্যাংক

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on print

ঢাকা, ৮ এপ্রিল: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এক বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের “জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল” – আনুষ্ঠানিকভাবে যার নাম বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (BSEZ)। এই ১০০০ একরের শিল্পনগরীটি বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

মঙ্গলবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫-এ বিশ্বব্যাংক গ্রুপের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি বাংলাদেশ চারটি বিশেষ খাতে কিছু জরুরি সংস্কার করতে পারে, তাহলে দেশটিতে বড় আকারের বিনিয়োগ আসবে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হবে।

বিশ্বব্যাংকের নতুন ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রাইভেট সেক্টর ডায়াগনস্টিক’ (CPSD) বলছে, কিছু সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশ নির্মাণ শিল্পে প্রতি বছর প্রায় ২৩ লাখ ৭০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে, বিশেষ করে সাশ্রয়ী মূল্যের বাড়ি তৈরির মাধ্যমে। এছাড়া, দেশীয় রঙ ও রঞ্জক উৎপাদন বাড়ানো গেলে আরও প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষের আনুষ্ঠানিক চাকরি হবে। এমনকি, ডিজিটাল আর্থিক সেবার কিছু সংস্কার আনলে ৯৬ হাজার থেকে ৪ লাখ ৬০ হাজার পর্যন্ত নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হতে পারে।

প্রতিবেদনে চারটি প্রধান ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে – পরিবেশবান্ধব তৈরি পোশাক শিল্প, মধ্যবিত্তের জন্য আবাসন, রঙ ও রঞ্জক শিল্প এবং ডিজিটাল আর্থিক সেবা। বিশ্বব্যাংকের মতে, এই খাতগুলোতে কিছু নীতিগত পরিবর্তন আনা গেলে বেসরকারি বিনিয়োগের পথে আসা বাধাগুলো দূর হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরকার যদি কিছু নির্দিষ্ট ও স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এই খাতগুলোতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, কর্মসংস্থান তৈরি করা, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার পর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এবং দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব হবে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে:

  • তৈরি পোশাক শিল্প: ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ব্যবস্থাকে উন্নত করা, পরিবেশ সুরক্ষার দিকে নজর দেওয়া, টেকসই উৎপাদন এবং শ্রমিকদের অধিকারের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া।
  • আবাসন খাত: পুরনো নিয়মে সম্পত্তির মূল্যায়ন না করে বর্তমান বাজার মূল্যে নির্ধারণ করা এবং ডিজিটাল ম্যাপিং ও সম্পত্তি নিবন্ধনের প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করা, যাতে সাধারণ মানুষ সহজে বন্ধকী ঋণ পেতে পারে।
  • রঙ রঞ্জক শিল্প: কাঁচামাল আমদানির প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করার জন্য কাস্টমস শ্রেণীবিভাগকে ডিজিটাল করা, যাতে ব্যবসায়ীরা সহজে নিয়মকানুন মেনে চলতে পারে।
  • ডিজিটাল আর্থিক সেবা: পাইকারি লেনদেন আরও সহজ করার জন্য মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের জন্য উচ্চ লেনদেনের সীমা নির্ধারণ করা এবং ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবহার আরও সহজলভ্য করা।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা)-র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, “বিশ্বব্যাংক গ্রুপের এই গবেষণা বেসরকারি খাতকে চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যবহার করে এমন নীতি ও কৌশল তৈরিতে মূল্যবান দিকনির্দেশনা দেবে এবং বাংলাদেশে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ভিত্তি স্থাপন করবে।”

তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি আরও ভালো ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করতে এবং নতুন শিল্পগুলোর বিকাশে সাহায্য করতে বদ্ধপরিকর, যা শেষ পর্যন্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।”

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেছেন, “নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় বাংলাদেশের জরুরি ভিত্তিতে কিছু পরিবর্তনমূলক নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দরকার, যাতে এখানকার ব্যবসাগুলো উন্নতি করতে পারে, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারে এবং প্রতি বছর চাকরির বাজারে আসা তরুণদের জন্য লাখ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক গ্রুপ বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে সরকার এবং অন্যান্য সকল পক্ষের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত।

আইএফসি-র বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হোল্টম্যান বলেছেন, “বিশ্বব্যাংক গ্রুপের অংশ হিসেবে আইএফসি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

বাংলাদেশ সিপিএসডি প্রতিবেদন প্রকাশের পর একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বাংলাদেশ সরকারের আন্তর্জাতিক বিষয়ক দূত লুৎফী সিদ্দিকী, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, নিপ্পন পেইন্টের হেড অফ অপারেশনস অরুণ মিত্র, বিকাশের সিইও কামাল কাদির, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর.এফ. হুসেন, অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির এবং এবিসি রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্রাবন্তী দত্ত তাদের মূল্যবান মতামত তুলে ধরেন।

এই আলোচনায় বক্তারা সংস্কারের গুরুত্ব এবং এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তারা মনে করেন, সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া গেলে বাংলাদেশ সত্যিই এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে।

আরও পড়ুন