সোমবার ২০ অক্টোবর, ২০২৫
সর্বশেষ:
ঢাকা বিমানবন্দর কার্গো ভিলেজ আগুন: রপ্তানিকারকদের ১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির আশঙ্কা শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আগুন ২৭ ঘণ্টা পর নিভল, কাঠামো ঝুঁকিপূর্ণ: এফএসসিডি ঋণ অবলোপনে নতুন নীতিমালা, ৩০ দিন আগে নোটিশ দেওয়া বাধ্যতামূলক করল বাংলাদেশ ব্যাংক শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুনে পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও গুরুত্বপূর্ণ স্যাম্পল ধ্বংস: বিজিএমইএ ইউএনবি’র সেমিনার: ব্যাংকে আমানতকারীদের অধিকার সুরক্ষায় দক্ষ ও পেশাদার পরিচালক নিয়োগের তাগিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত ২৫ দলের সনদ স্বাক্ষর: অংশ নিলেন না জুলাই আন্দোলনের প্রধান দল এনসিপি ও বামপন্থীরা সুর ও ছন্দে ঢাবি চারুকলার বকুলতলায় শরৎ উৎসব উদযাপন ইসলামি ব্যাংকিংয়ে সুশাসন বাড়াতে ‘শরিয়াহ উপদেষ্টা বোর্ড’ গঠন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক

ঢাকা বিমানবন্দর কার্গো ভিলেজ আগুন: রপ্তানিকারকদের ১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির আশঙ্কা

গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি ব্যাবসায়ী নেতৃবৃন্দের

ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) কার্গো ভিলেজে লাগা ভয়াবহ আগুনে দেশের রপ্তানি খাতে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার (১২ হাজার কোটি টাকা) সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে বলে সোমবার (২০ অক্টোবর) জানিয়েছে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)।

সোমবার রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এই ক্ষতির প্রাথমিক ধারণা প্রকাশ করেন।তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের কাছে সময়মতো পণ্য পৌঁছানো নিশ্চিত করতে কার্গো ভিলেজ এবং অন্যান্য আমদানি-রপ্তানি পয়েন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, ফার্মাসিউটিক্যালস অ্যান্ড মেডিসিন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন সহ রপ্তানি সংশ্লিষ্ট সকল খাতের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

কর্তৃপক্ষের চরম ব্যর্থতা: ইএবিইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কর্তৃপক্ষের চরম ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, কার্গো ভিলেজের মতো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কার্যকর ফায়ার ডিটেকশন ও সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই আগুনের কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কেবল পুড়ে যাওয়া পণ্যের মূল্য নয়, বরং এর চেয়েও অনেক বেশি।হাতেম বলেন, “এই মুহূর্তে রপ্তানিকারকদের ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করা কঠিন।”পোড়া যাওয়া পণ্যের সরাসরি ক্ষতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এটিই একমাত্র ক্ষতি নয়। পুড়ে যাওয়া কাঁচামাল দিয়ে যে তৈরি পণ্য রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল, তা না হওয়ায় আরও বড় ক্ষতি হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।”

নাশকতার ষড়যন্ত্র চলছে”: শওকত আজিজ রাসেল সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি হওয়ার পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সুনাম ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার জন্য একটি গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।

তিনি অভিযোগ করেন যে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যর্থতার কারণে কিছু রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশের উৎপাদন ও রপ্তানি খাতকে অস্থিতিশীল করার জন্য কাজ করছে।

তিনি সতর্ক করে দেন যে এই বিপর্যয় আগামী দিনগুলোতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে চরমভাবে বাধা সৃষ্টি করবে, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রেতাদের আস্থা কমে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।

ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সদস্যদের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে তাদের ধারণা, সামগ্রিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। সামগ্রিক ক্ষতির সঠিক চিত্র পেতে একটি স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া জরুরি বলেও তিনি মনে করেন।

ঔক্ষতিগ্রস্ত মূল রপ্তানি পণ্যসমূহবিকেএমইএ-এরও সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কার্গো ভিলেজে থাকা পণ্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল:

পোশাক শিল্প: তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা জরুরি ভিত্তিতে বিমান যোগে হালকা যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল, অ্যাক্সেসরিজ এবং গুরুত্বপূর্ণ স্যাম্পল (নমুনা) আমদানি-রপ্তানির জন্য এই ভিলেজ ব্যবহার করেন।

ফার্মাসিউটিক্যালস: ওষুধ শিল্প অতি সংবেদনশীল ওষুধ রপ্তানি এবং কাঁচামাল আমদানির জন্য এর উপর নির্ভরশীল।অন্যান্য পণ্য: হিমায়িত খাদ্য, কৃষি পণ্য, শাকসবজি ও ফলমূলসহ অন্যান্য পচনশীল পণ্য রপ্তানিকারকরাও এই স্থান ব্যবহার করেন।

হাতেম বলেন, এই পণ্যগুলো সময়মতো বিদেশে না পৌঁছালে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসগুলোও গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র ও পার্সেল আদান-প্রদানে এই ভিলেজ ব্যবহার করে।বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা হারানোর শঙ্কাদেশে বারবার অগ্নি দুর্ঘটনার ঘটনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে হাতেম বলেন, বিমানবন্দরের মতো অতি সংবেদনশীল এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ড দেশের সুনামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

তিনি বলেন, “এটি একটি গুরুতর উদ্বেগ যে এই অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হতে পারেন, যা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”সাম্প্রতিক সময়ে আশুলিয়া, মিরপুর, চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসে ধারাবাহিকভাবে আগুন লাগার ঘটনা উদ্যোক্তাদের মধ্যে “গভীর উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা” সৃষ্টি করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি প্রশ্ন করেন, এই ধরনের ঘটনায় গাফিলতির জন্য কি কারো জবাবদিহিতা থাকবে? “আমরা মনে করি, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে সরকারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে একটি স্বচ্ছ ও কার্যকর তদন্ত শুরু করা জরুরি,” হাতেম যোগ করেন।